‘দেশ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশ এখন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এই দুর্যোগ জাতির স্বাধীনতা, ভাষা ও অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানছে।’
শনিবার বিকেলে অমর একুশে উপলক্ষে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় অর্জন ধরে রাখতে , দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে এবং জাতির মাথা উঁচু রাখতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে এদের প্রতিরোধ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে আমাদের জন্য একটি শিক্ষা।’
অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে নিজস্ব মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সেলিনা হোসেন। সেমিনারের বিষয় ছিল ‘ভাষা আন্দোলন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : নারীর প্রজ্ঞা।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলীও বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে একুশের আমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ অনুবাদ করে মারমা, ত্রিপুরা, বম ও ম্রো ভাষায় গাওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটা দেশ যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। এখানে কোনো অমানবিক কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না।’
মাতৃভাষার জন্য শাহাদাতকে আলিঙ্গন করে বাঙালি জাতি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ববাসী তাদের সাহস ও ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে অর্জিত সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চায় না। শুধু তাই নয়, তারা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন পছন্দও করে না। একুশে ফেব্রুয়ারি অথবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালি জনগণের জন্য শুধু একটি উৎসবের বিষয় নয়, এই দিবস ভাষা অনুরাগী প্রতিটি মানুষের।’
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার চায় বাংলা ভাষাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার আওতায় বাংলা কীবোর্ড ও বাংলা ডোমেইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। মোবাইলে বাংলা কী প্যাড স্থাপন করা হয়েছে এবং বাংলা ডোমেইন তৈরি করা হয়েছে। এখন বহু মানুষ এ আবিস্কারের সুফল ভোগ করছে। বর্তমান সরকার বাংলা ভাষা, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি এ ব্যাপারে সহায়তা করার জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা সকল বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানা্ন, আওয়ামী লীগ ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে এবং সরকারিভাবে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করে। তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাকে নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেন। আমিও তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি।’
ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণের জন্য কানাডা প্রবাসী দুই বাঙালি রফিক ও সালাম এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ক্লাবের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার অন্যান্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের মতো এটিও সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালার, আলোচনাসভার আয়োজন এবং বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র : বাসস।
মন্তব্য চালু নেই