‘দেশ ডিজিটাল না হলেও দেশের মানুষ ডিজিটাল হয়েছে’
সরকারিভাবে ফেসবুক বন্ধ রাখা সত্ত্বেও আমাদের ফেসবুক পাতায় অসংখ্য মন্তব্য এসেছে৷ তবে কীভাবে এ সব মন্তব্য পাঠাচ্ছেন, তা জানাতে রাজি নয় অনেক বন্ধুই৷ কারো আশঙ্কা, জানালে হয়ত সরকার সে পথও বন্ধ করে দিতে পারে৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনের কথা বলে অনলাইনের ওপর নানা ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথাও বলেছেন এবং শেষে ফেসবুক বন্ধ করেছেন৷ দেশ থেকে ফেসবুকে ঢোকা বন্ধ থাকার পরও যখন আমারা বন্ধুদের কাছ থেকে এত মন্তব্য পাচ্ছি, তখন স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুকে আমাদের প্রশ্ন ছিল যে, কীভাবে তাঁরা মন্তব্যগুলো পাঠাচ্ছেন? বন্ধুদের মন্তব্য পড়ে অবশ্য মনে হচ্ছে যে, তাঁরা আসল কথা জানাতে ভয় পাচ্ছেন পাচ্ছেন, পাছে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়!
এই এ সালাম লিখেছেন, বলুম না….আবার যদি এইডাও বন্ধ কইরা দেয়…৷”
মো. অরুন রফিক অন্যদের সাবধান করে দিয়ে লিখেছেন, ‘‘কেউ বলবেন না!”
বন্ধু রনির কথায়, ‘‘আপনাদের বলবো কেন?”
বাংলাদেশ থেকে যেহেতু ফেসবুক বন্ধ করা হযেছে তাই আসল উত্তরে না গিয়ে পাঠক আবদুল্লাহ বিন হাবিব দুষ্টুমি করে লিখেছেন, ‘‘আমি বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক ব্যবহার করছি না৷ কখনো ফ্রান্স, কখনো স্পেন, আবার কখনো জাপান কিংবা জার্মানি থেকে ‘ইউজ’ করছি৷”
তারেক মাহমুদ কোনোভাবেই ডয়চে ভেলেকে জানাতে রাজি নন যে, তাঁরা কীভাবে ফেসবুকে ঢুকছেন৷ মনে হয় তাঁরও ভয় রয়েছে৷ তিনি অন্য বন্ধুদের লক্ষ্য করে লিখেছেন, ‘‘আরে আমার বাংলাদেশি বেকুব বন্ধুরা….কেন বলে দিচ্ছ….গোপন কাহিনি…৷”
মজা করতে ছাড়েননি ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু সাদমান ইসলাম রফিও৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইন্টারনেট কানেকশন অন করে, মজিলা ফায়ারফক্সে ঢুকে, ওয়েব অ্যাড্রেস-এর যায়গায় www.facebook.com লিখে এন্টার প্রেস করেছি, ব্যাস!”
মনে হয় প্রযুক্তিতে সিদ্ধ হস্ত বন্ধু অন্তর রাজ চক্রবর্তী৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি মোবাইল দিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছি৷ যতদিন ইন্টারনেট আছে ততদিন কোনো কিছুই ফেসবুক বন্ধ করতে পারবে না, যত মত, তত পথ৷ কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে ফেসবুক৷”
‘‘চালাইতেছি না, আমার ফেসবুক বন্ধ গত দু’দিন থেকে৷” এই মন্তব্যটি দেখলে কি মনে হয় যে, ফেসবুক বন্ধ থাকায় কেউ দুঃখিত? এই মন্তব্যের লেখক সাদেক হোসেন৷ প্রায় একই ধরণের মন্তব্য বন্ধু মাসুদ হাসান ও বিজয়ের৷ সাজ্জাদুল করিম বিজয় লিখেছেন, ‘‘আমরা তো বাংলাদেশ নামক গ্রহের স্বল্প সংখ্যক ‘এলিয়েন’….তাই না বন্ধুরা?”
বন্ধু মারুফ হোসেন এ বিষয়ে কিছুই বলতে চান না ভয়ে৷ আত্মবিশ্বাসী শাফিন মাহমুদের মন্তব্য, ‘‘বুকে হাত দিয়ে বললাম! সরকার যদি তার ১০০টা পথ অবলম্ভন করে, তবে আমি ২০০টা পথ পথ ব্যবহার করবো!!!”
মহিনউদ্দিনও বলতে চান না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘কমু না, দালালরা কইয়া দিবে৷”
বাংলাদেশের মানুষ যে এরই মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে, সেকথাই জানিয়েছেন ডিডাব্লইউ-র পাঠক বন্ধু জোবায়ের হোসেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সরকার যেভাবে ফেসবুক বন্ধ করছে, আমরা তার বিপরীত পথে চালু করেছি…৷ দেশ ডিজিটাল না হলেও দেশের মানুষ যে ডিজিটাল হয়েছে এটা তারই প্রমাণ!”
সত্য কথাটা কিছুতেই আমাদের জানাবেন না জামিল হোসেন৷ তাই তিনি মজা করে লিখেছেন, ‘‘ডয়চে ভেলে যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছে, তিনিও ঠিক সেভাবেই করছেন৷”
মাহবুবুর রহমানেরও প্রায় একই কথা৷ অর্থাৎ ‘‘আগে যেভাবে ব্যবহার করতাম সেভাবেই!”
বন্ধু রাব্বির বলছেন, ‘‘জনতার ভয়ে আর কী করবে শেখ হাসিনা?”
‘‘এটা অতি গোপন কথা, বলবো না” – এই মন্তব্য মো.জাহিদুল ভুঁইঞার৷
ভিপিএন, প্রক্সি ফেসবুক ব্যবহার করা নাকি কোনো ব্যাপারই না পাঠক সামি মঞ্জিলের কাছে৷
নন্দিনীও জানিয়েছেন যে, ভিপিএন এবং ইউসি ব্রাউজারের সাহায্যে তিনি ফেসবুকে ঢুকছেন৷
অমিত সরকার, আল ইমরান এবং আরো কেউ কেউ-ও ভিপিএন-এর মাধ্যমে ফেসবুকে ঢুকছেন৷
মো. ওমর সনিও বলতে চান না, তবে আমরা অন্য কিছু জানতে চাইলে কিন্তু তিনি বলতে রাজি আছেন৷
নাহিদুজ্জামানও বলবেন না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘জানতে চাইলেই বলে দেবো!”
ফরহাদ হোসেনও বলবেন না৷ তবে তিনিও দুষ্টুমি করে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে চালাই না, নেট চালানোর জন্য ফ্রান্সে আছি৷”
পাঠক রাতুল সরকার নাকি ‘অপেরা’ দিয়ে ফেসবুক চালাচ্ছেন৷
রানা রাসেল নিশ্চিত যে, ফেকবুক বন্ধ করার ক্ষমতা নাকি কারো নেই৷
সারজিল হোসেন বলছেন, ‘‘‘জয় বাংলা’ লিখলেই সব ব্যবহার করা যায়৷”
মোখলেসুর রহমানের মতে, ফেসবুকে ঢোকার নাকি অনেক ব্যবস্থা রয়েছে৷
মো. তানভীর আহম্মেদ ১১০০ মডেলের নকিয়া থেকে ফেসবুকে ঢুকছেন৷
লতিফ বিনয়ের সাথে জানিয়েছেন, ‘‘ভাই, বলতে ভয় করে৷”
সূত্র: ডয়চে ভেলে
মন্তব্য চালু নেই