দেশে ফিরল ‘তিন পা নিয়ে জন্ম’ নেয়া শিশু চৈতি

তিন পা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশু চৈতির সফল অস্ত্রোপচার শেষে মায়ের সঙ্গে দেশে ফিরে এসেছে।অস্ট্রেলিয়ার মনাশ শিশু হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার শেষে সুস্থ হয়ে ফিরেছে তিন বছরের শিশু চৈতি।

চৈতিকে বিশ্বের প্রথম ম্যারাথন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসক দল।সফল এ চিকিৎসা শেষে এখন আর দশটা শিশুর মতোই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে চৈতি।

গতকাল শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরেছে শিশু চৈতি ও তার মা। রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় তারা।

বিমানবন্দরে মেয়ে ও স্ত্রীকে নিতে আসেন চৈতির বাবা পোশাক শ্রমিক মো. আসাদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, হৃদয়বান কয়েকজন মানুষের সহায়তায় আমার মেয়ে সুস্থ হয়েছে। আমি তাকে দুঃখী মানুষের চিকিৎসায় নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

২০১৪ সালে দেশের একটি হাসপাতালে তিন পা নিয়ে জন্ম হয় শিমা খাতুন ও মো. আসাদ দম্পতির সন্তান চৈতির।সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে চৈতির তলপেটের মাঝ বরাবর একটি পা ছিল, যা সামনের দিকে একটু বাঁকানো।এছাড়া তার জননাঙ্গ ও পায়ুপথ স্বাভাবিক ছিল না।

জন্মের আটদিন পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক কানিজ ফাতেমার তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয় চৈতিকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কয়েক দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চৈতির তৃতীয় বা অস্বাভাবিক পা কেটে ফেলা হয়। পেটের দিক থেকে ফুটো করে তৈরি করা হয় কৃত্রিম পায়ুপথ। কিন্তু কোনো অগ্রগতি না থাকায় একপর্যায়ে চিকিৎসা স্থগিত করেন চিকিৎসকরা।

চৈতি বেড়ে উঠতে থাকে অস্বাভাবিক শরীর নিয়েই। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন দেশের বাইরে নিয়ে গেলে চৈতিকে স্বাভাবিক করে তোলা সম্ভব।

কিন্তু গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করা স্বল্প আয়ের আসাদের পক্ষে মেয়েকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না। হতাশা ভর করে আসাদ ও শিমার মধ্যে।

চৈতির বাবা আসাদ বলেন, বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের পিছনে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তারা যখন বলে দিয়েছেন তাদের পক্ষ আর চিকিৎসা সম্ভব না তখন যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কি করি?’

তিনি জানান, এরপর তার সন্তানের সহায়তায় এগিয়ে আসে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাসাইনটিং অ্যাকশন ফর চেঞ্জিং অব লাইভলিহুডস (আঁচল ট্রাস্ট)। আঁচল ট্রাস্ট মূলত জটিল, দরিদ্র ও অসহায় অস্বাভাবিক শিশুদের দায়িত্ব নিয়ে থাকে।

তেমনি চৈতির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় সংস্থাটি। আঁচল ট্রাস্টের উদ্যোগে চৈতি ও তার মাকে গত বছর পাঠানো হয় অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে তার দায়িত্ব নেয় মেলবোর্নভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা চিলড্রেন ফার্স্ট ফাউন্ডেশন।সংস্থাটির সার্বিক সহায়তায় ও ১০ মাসের চিকিৎসা শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে চৈতি।

মনাশ শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল গত ১৪ নভেম্বর টানা আট ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চালায় ক্ষুদ্র চৈতির দেহে। তারা বিশ্বের প্রথম ম্যারাথন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির শরীরের তৃতীয় পা অপসারণ ও শরীর পুনর্গঠনে কাজ করেন।



মন্তব্য চালু নেই