দেশে ফিরতে উদগ্রীব হাজারো মালয়েশিয়া প্রবাসী
‘গত সাড়ে চার বছর ধরে মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধব কাউকে দেখি না। দালালের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় টানা ৯ দিন সাগর পাড়ি দিয়ে প্রথমে থাইল্যান্ড ও পরে মালয়েশিয়ায় এসেছিলাম। এখানে শরণার্থী হিসেবে জাতিসংঘের কার্ড নিয়ে মাসিক ১২শ রিঙ্গিত বেতনে বার্ড পার্কে ক্লিনারের চাকরি করছি।’
‘কোম্পানি দুই বেলা খাবার দেয়। কিন্তু তা খাওয়া যায় না। রাতে পার্কের ভেতর কনটেইনারে থাকি। দেহটা মালয়েশিয়ায় থাকলেও সারাক্ষণ মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। সবাইকে খুব দেখতে মন চায়।’
কুয়ালালামপুরের বার্ডস পার্কে ক্লিনার হিসেবে কর্মরত সাইফুল বলেন, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের সংসার চালাতে বাবা হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্থানীয় এক দালালের সঙ্গে নগদ দুই লাখ টাকার চুক্তিতে ট্রলারে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া আসেন।
কীভাবে সাগর পাড়ি দিলেন জানতে চাইলে সাড়ে চার বছর আগের সেই ৯ দিনের কথা মনে করে ভয়ে কেঁপে ওঠেন। জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার মোট ৪৩৭ জনকে নিয়ে সাগরে জাহাজ ভাসায়।
টানা ৯ দিন সাগর পাড়ি দেয়ার সময় তাদের সকালে এক কাপ চা ও দুপুরে একটা পাতলা রুটি খেতে দেয়া হতো। ক্ষুধায় অনেকেই কঙ্কালসার হয়ে পড়েছিল। একপর্যায়ে থাইল্যান্ডের একটি জঙ্গলের অদূরে জাহাজ থামিয়ে সবাইকে সাঁতরে ডাঙ্গায় উঠতে চার মিনিট সময় বেঁধে দেয়া হয়।
ওই সময়ের মধ্যে ডাঙ্গায় উঠতে না পারায় অনেককে ফেলেই চলে যায় দালালরা। পরে তারা জানতে পারে দালালরা ঘুষ প্রদান করে থাইল্যান্ড পুলিশের কাছ থেকে অল্প সময়ের জন্য টহল শিথিল করিয়ে নেয়। ওই সময়ের মধ্যে যারা জঙ্গলে পালাতে না পারে তাদের করুণ পরিণতি হয়। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে কয়েকদিন থাকার পর তাদের লরিযোগে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
মোহাম্মদ সাইফুল বার্ডস পার্কে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক পর্যটকের দেখা পেলেও উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করেন বাংলাদেশি কারো দেখা পাওয়ার আশায়। দেখা হলেই আফসোস করে দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানান।
শুধু সাইফুল একা নন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী তার মতো হাজারো বাংলাদেশি জন্মভূমিতে ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। মালয়েশিয়া সরকার এসব বিদেশির বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে আবেদনপত্র গ্রহণ করছেন। বর্তমানে তারা বৈধতা পেয়ে দেশে ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
মন্তব্য চালু নেই