‘দেশে প্রতি তিনজনের একজন মাদ্রাসা ছাত্র’
দেশে প্রতি তিনজনের একজন মাদ্রাসা ছাত্র বলে দাবি করেছেন অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত। তার মতে দেশে কওমি মাদ্রাসার এক কোটি ছাত্র রয়েছে। তাদের সবাই হেফাজতে ইসলাম। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভাবছেন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। কিন্তু এই হেফাজতিদের নিয়ন্ত্রণ করবেন কিভাবে?
রবিবার বিকালে শাহবাগে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণজাগরণ মঞ্চের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, উগ্র মৌলবাদ, ৭২ এর সংবিধান, কোন পথে বাংলাদেশ?’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অজয় রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও আলোচনা করেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান প্রমুখ। এ উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
আবুল বারাকাত বলেন, ‘আজকে জামায়াতে ইসলামীর ৯৩% আলহাজ। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল একসময় নিষিদ্ধ ছিল। পাড়ার ধর্মীয় সংগঠন নিষিদ্ধ ছিল। পরে সেগুলো অনুমোদিত হয়। এখন কেউ জাতীয়তাবাদী আওয়ামী ইসলামি দল করলে বাতিল করতে পারবেন?’
সরকারের উদ্দেশ্যে আবুল বারাকাত বলেন, ‘একটা ইসলামী ব্যাংকে হাত দিয়েছেন। ইসলামী ব্যাংক জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত- এটা প্রমাণ করার দরকার নেই। প্রমাণিত হয়েছে। সব প্রগতিশীল সামাজিক সংগঠনের এর বিরুদ্ধে মাঠে নামা উচিত।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আজকের আলোচনার শিরোনামই বলে দিচ্ছে দেশ কোন পথে। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পর মুসলিম লীগের কিছু নেতা বলেছিলেন – কী বাংলাদেশ বানাইলা ঘরে ঘরে পর্দা। আমাদেরও আজ সে অবস্থা।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় এলে ভূমি সংস্কার করা হবে এ কথা বলে গ্রামের লোকদের মাথায় হাত বুলিয়েছেন। অথচ কেউ কি কৃষি সংস্কার, ভূমি সংস্কার, জলা সংস্কার করেছে? ’
আবুল বারাকাত বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক, অর্থনৈতিক রাষ্ট্র কাঠামো চেয়েছিলাম। গত ৪৫ বছরে যা ঘটে গেছে অর্থনীতি পুরাই দুর্বৃত্তায়িত এবং মৌলবাদের অর্থনীতি। সংবিধানের অর্থনৈতিক নীতি নেই। নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানা বলে কোনো কিছুই নেই। সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা। এটা আনা হয়েছে রাজনীতিবিদের মাধ্যমে। অর্থনীতি দুর্বৃত্তায়িত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘দারিদ্র মাপছেন কী দিয়ে? খাদ্যের পুষ্টির দারিদ্র বেড়েছে, শিক্ষার দারিদ্র বেড়েছে। পাঠ্যপুস্তরকে হেফাজতের দাবি মানা শিক্ষার দারিদ্র বলবেন না?’
ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী- বলেন, ‘এই আন্দোলনে বিজয়ী হবোই হবো। হেফাজতের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলবে। রাজপথে আমাদের পদচারণা অব্যাহত থাকবে। হারানো সবার শোক শক্তিতে পরিণত হবে।’
খুশি কবির বলেন, ‘সংবিধান আমাদের বলে দেয় আমাদের আইন কী হবে। রাষ্ট্র দেশ কোন পথে এগোচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন আসতে পেরেছে। কারণ আমাদের চিন্তার জায়গাটা স্পষ্ট নয়। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য যুদ্ধ হয়েছিল সেখানে যারা বই প্রকাশ করছেন, কথা বলছেন তাদের কীভাবে হত্যা করা হচ্ছে সবাই দেখেন।’ তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সংগঠনের তোয়াজ করলে কিভাবে অসাম্প্রদায়িকতা, নারীর শ্রদ্ধা আসবে? ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে আমরা যেভাবে জেগেছিলাম সেভাবে আবারও দাঁড়াতে হবে।’
এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘দেশে যেভাবে কওমি মাদ্রাসা ছড়িয়ে যাচ্ছে, সরকারকে এর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে। বারবার কম্পোমাইজ করে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়ানোর সুযোগ করে দেয়া যাবে না।’
আবু সাঈদ খান বলেন, ‘সংবিধান গোজামিলের সংবিধান। আজকে হেফাজতের কথায় পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন হচ্ছে। সংবিধানকে একাত্তরের চেতনায় ফিরিয়ে আসতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই