দেশে এখনও ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর

দেশে শতভাগ শিক্ষার লক্ষ্যমাত্রায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও সকল ক্ষেত্রেই এ পদক্ষেপ পিছিয়ে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ বাড়লেও এখনো প্রায় অর্ধেক মানুষ নিরক্ষর। বর্তমানে সাক্ষরতার হার মাত্র ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর রয়েছেন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানে (ক্যাম্প) দেশব্যাপী এক সমীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যের সঙ্গে অনেক গড়মিল রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ক্যাম্পের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সাক্ষরতার বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য সরকারসহ আমাদের কারও কাছে নেই। এরমধ্যে উন্নয়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি (টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা) গ্রহণ করেছে বিশ্ব। তাই সাক্ষরতার বিষয়ে নতুন তথ্যের প্রয়োজনে এ সমীক্ষা চালানো হয়েছে।

সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুযায়ী, এসব মানুষ লিখতে, পড়তে, হিসাব কষতে এবং বুঝতে পারে না। ইউনেস্কোর মতে, এই চারটি মানদণ্ডে ব্যক্তির সাক্ষরতা নিরূপণ করা হয়। এক সময়ে কেবল নাম লিখতে পারলেই অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন বলা হতো।

ক্যাম্পের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, মোট সাক্ষরতার হার যাই হোক, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে খুশির খবর হচ্ছে, তরুণদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশই সাক্ষর।

সাধারণত ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষকে তরুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে সরকারিভাবে সাক্ষরতার হার নিরূপণ করা হয়। এর আগে ২০০৮ সালে আহছানিয়া মিশন ও ২০০২ সালে ক্যাম্পে সাক্ষরতার ওপর সমীক্ষা চালায়। ২০১১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৫৮ শতাংশ।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেছিলেন, সাক্ষরতা নিয়ে লেটেস্ট কোনো সার্ভে (সমীক্ষ) নেই। তবে তার নিজের এলাকার শতভাগ মানুষ সাক্ষর। এমনি শতভাগ সাক্ষরতার অধীন আরও বেশকিছু এলাকা আছে। সেসব ধরেই তিনি মনে করছেন, দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ।

তবে ক্যাম্পের ‘সাক্ষরতা, দক্ষতা এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা : বাংলাদেশে এসডিজি-৪’ শীর্ষক এ সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে দেশে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ সাক্ষর মানুষ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে শহরে ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং গ্রামে ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার হিসাবে পুরুষদের সাক্ষরতার হার ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ, নারীদের ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং অন্যান্য জেন্ডারেরর সাক্ষরতার হার ৪০ দশমিক ১ শতাংশ।

সমীক্ষায় বয়সভিত্তিক সাক্ষরতাও বের করা হয়েছে। ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের বয়সীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার প্রায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে আছে ৭৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষের সাক্ষরতার হার ২০ দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে গত ছয় বছর ধরে দেশে সাক্ষরতার হার নিয়ে চরম তথ্য বিভ্রাট চলছে। খোদ মন্ত্রী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যের সঙ্গেই বিরাট ফারাক বিদ্যমান। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১০১৫ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ৬৪ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০১৪ সালে ৬১ দশমিক ১৪ শতাংশ। সংস্থাটি তথ্যমতে, ২০১৩ সালে ৬১ দশমিক ০৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৬০ দশমিক ০৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ৫৮ দশমিক ০৮ শতাংশ মানুষ সাক্ষর ছিল।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আফছারুল আমীন দাবি করেছিলেন, সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। এর পরের বছর একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ সাক্ষর।

২০১৪ সালের জুলাই মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ৪৫২ কোটি টাকার নিরক্ষরতা দূরীকরণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সে সময় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, সাক্ষরতার হার ৬৭ ভাগ। অন্যদিকে ইউএনডিপির সর্বশেষ (২০১৪ সালের) পরিসংখ্যান অনুসারে বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠী হচ্ছে ৫৭ শতাংশ।জাগো নিউজের সৌজন্যে।



মন্তব্য চালু নেই