নড়াইল বিএনপির সাথে খালেদা জিয়ার বৈঠক

দেশে এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার বর্বর দুঃশাসন চলছে

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দল গোছানোর অংশ হিসেবে নড়াইল জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রবিবার রাত ৯টার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, নড়াইল জেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাসসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় দুইশত নেতা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় পৌনে একঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে তৃণমূল নেতারা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে চেয়ারপারসনকে অবগত করেন। বৈঠক শেষে নড়াগাতি উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মতিয়ার রহমান খান জানান, ‘ম্যাডামকে বলেছি ভোট ডাকাতির পরও নড়াইলের বিভিন্ন জায়গায় মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। বিএনপি নড়াইল কমিটি দুর্বল নয়। আমরা প্রস্তুত আছি। যে কর্মসূচি দেয়া হবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।’ খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে মতিয়ার রহমান খান আরো বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের কার্যক্রমে খুশি হয়েছেন। তিনি বলেছেন যেখানে দুর্বল কমিটি সেখানে নতুন কমিটির মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আগামী একমাস পর যে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে তা সফল করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।’ নড়াগাতি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম ফয়সাল রহমান বলেন, ‘জাহাঙ্গীর বিশ্বাসের নেতৃত্বে নড়াইল জেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। তাই জাহাঙ্গীর বিশ্বাসকে ম্যাডাম নড়াইল বিএনপির দায়িত্বে বহাল রেখেছেন। আমাদের কার্যক্রমে ম্যাডাম খুশি হয়েছেন।’
উল্লেখ্য, এর আগে রংপুর, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনাসহ কয়েকটি জেলার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদ জিয়া। এসব জেলায় ৪৫ দিনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম জিয়া তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান শাসকগোষ্ঠী স্বেচ্ছাতন্ত্রের শেষ সীমানা অতিক্রম করে অতিকায় দানব হয়ে উঠেছে। দেশের মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। চারিদিকে গভীর হতাশা ও নৈরাজ্যে দেশ আজ গভীর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।’

রোববার সন্ধ্যায় দলটির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে চেয়ারপারসন এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে দেশে আইনের শাসন এতটাই ভুলুণ্ঠিত হয়েছে যে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িত করার পরও তাদের আইনী প্রতিকার পাবার অধিকারটুকুও চরমভাবে হরণ করা হচ্ছে। দেশে এখন আইনের শাসনের বদলে এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার বর্বর দুঃশাসন চলছে। আর এই দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে বর্তমান অবৈধ সরকার নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে দমন করতে পুলিশ প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছে। এর ফলে বিরোধী মত, বিবেক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে নিষ্ঠুর পীড়নে স্তব্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যার একটি নতুন বহিঃপ্রকাশ দেখা গেলো- আজ বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের মধ্য দিয়ে।’
মিথ্যা, বানোয়াট ও মনগড়া মামলায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমান উল্লাহ আমানের জামিন বাতিল এবং কারান্তরীণ করার ঘটনা দুরভিসন্ধিমূলক ও সরকারের বন্য প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে বেগম জিয়া উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ সরকারের টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে নির্যাতন, নিপীড়ন, মামলা, হামলা, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, হুমকি-ধামকি, কুৎসা ও নির্জলা মিথ্যাচার।’
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন অবিলম্বে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমান উল্লাহ আমান এর মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই