দেশের বড় সন্ত্রাসী নিজাম হাজারী
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী নিজাম হাজারী। বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যেখানে দিনদুপুরে কোনো জনপ্রতিনিধিকে খুন করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত করেছেন।’
মঙ্গলবার একান্ত সাক্ষাতকালে তিনি এ কথা বলেন।
ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর এমপি পদ নিয়ে জারি করা দু’টি রুল প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দীতে নিজাম হাজারীর সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘নিজাম হাজারীর এমপি পদ ও দলীয় পদ হারানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।’
তবে সবার এক কথা, ‘নিজাম হাজারীকে চাইনা।’ সন্ত্রাস ও জালিয়াতি চক্র এরা কখনো আইন প্রণয়নকারী (সংসদ সদস্য) হতে পারেনা। আইনের ফাঁক-ফোকরে নিজাম হাজারী যেন বের না হতে পারেন সেটি চান খোদ দলীয় নেতারাই।
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল বলেন, ‘নিজাম হাজারীর ব্যাপারে হাইকোর্টে রুল জারি হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই বলবোনা। আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। একসময় ফেনী ছিল সন্ত্রাসের জনপদ। এখন আবার নিজাম হাজারীই ফেনীকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করছে। কথায় কথায় মানুষ খুন করছে। রাস্তাঘাটে খুন করা হচ্ছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম বলেন, ‘নিজাম হাজারীর বিষয়ে আমি কিছুই বলবোনা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে একরাম হত্যার বিষয়ে কি কথা হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নিজাম হাজারী সেদিন বলেছেন, এ হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত নন।’
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ রাজনৈতিক জানিয়েছেন, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরাম হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দীতে নিজাম হাজারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ মূহুর্তে নিজাম হাজারীকে দল থেকে বহিষ্কার করলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। সে কারণে করা হচ্ছেনা। তবে নিজাম হাজারীকে যেকোনো মূহুর্তে দল থেকে বাদ দেয়া হবে।
অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেয়ার মতো কোনো নেতা গড়ে উঠেনি। সে কারণে তাকে বহিষ্কার করা হচ্ছেনা। তিনি জানিয়েছেন এমপি পদ হারালে অবশ্যই দলীয় পদও হারাবেন নিজাম হাজারী।
এদিকে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রুল জারি হওয়ায় একরাম সমর্থকরা উজ্জ্বীবিত। তারা একরামের শোককে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যেতে চাইছেন।
একরাম মঞ্চের এক সমর্থক জানান, নিজাম হাজারীর ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব নাজিল হবে। সন্ত্রাস কখনো আইন প্রণয়নকারী (সংসদ সদস্য) হতে পারেনা।
সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে দু’টি রুল জারি করেন। রুলে নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ব বলে এমপি পদে বহাল আছেন এবং তার আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
এ বিষয়ে নিজাম হাজারী রুলের সদুত্তর দিতে না পারলে এমপি পদ হারাবেন। আর এমপি পদ হারালে দল থেকেও বাদ পড়বেন বলে দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে।
নিজাম উদ্দিন হাজারী এখন ফেনীর দ্বিতীয় গড়ফাদার। অল্প সময়ের বহু ঘটনার নায়ক। ছদ্মবেশি অস্ত্রমামলায় দশ বছর সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি একের পর এক ফেনী পৌরসভার মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সর্বশেষ ফেনী-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্যসহ বহু সম্মানিত আসনে আসীন হয়েছেন।
সংসদ সদস্যের ছয় মাস না পেরুতে খোলস পড়ে ছদ্মবেশি নিজাম এখন আবার সন্ত্রাসীর তকমা পেয়েছেন দলীয় কর্মীদের থেকে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তার বাস্তব চিত্র। অস্ত্র মামলায় দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটেই কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়া, তিন বছরের ব্যবধানে ৩২ গুণ টাকা বাড়া, একরাম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে জাপার কাছে মেয়র পদ বিক্রির অভিযোগ, জয়নাল হাজারীর সঙ্গে নতুন বিবাদে জড়িয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন।
এত অল্প সময়ে নেতা বনে যাওয়ার পাশাপাশি এতসব অপকর্ম ঘাড়ে নিয়ে নিজাম হাজারী বিপাকে পড়েছেন। এমন বক্তব্য খোদ দলের সিনিয়র নেতাদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দুই বছর ১০ মাস কম সাজা খেটেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন নিজাম উদ্দিন হাজারী। অস্ত্র আইনের একটি মামলায় তার ১০ বছর সাজা হয়েছিল। জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় তার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলাও হতে পারে।
আইনজীবীরা মনে করেন, জালিয়াতির ঘটনা সত্য হলে নিজাম হাজারীকে আবার কারাগারে ফিরে যেতে হবে।
নির্বাচন কমিশনে নিজাম হাজারীর জমা দেয়া হলফনামায় জানা যায়, তিন বছরের ব্যবধানে ফেনী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর শুধু টাকা বেড়েছে ৩২ গুণ। একই সঙ্গে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পত্তিও। এ সময়কালে তার স্ত্রী পাঁচটি ফ্ল্যাট ও রামগড়ে ১৫ একর জমির মালিক হয়েছেন।
পৌর নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজাম হাজারী নিজের এবং স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের বিবরণ দেন।
তাতে দেখা যায়, ওই সময়ে নিজাম হাজারীর নামে ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ১০ লাখ আর স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র/স্থায়ী আমানত ছিল এক কোটি টাকা। তখন তার কাছে নগদ টাকা ছিল ৫০ হাজার, স্ত্রীর কাছে ছিল ৫০ হাজার টাকা।
২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন নিজাম হাজারী। এর তিন বছরের মাথায় তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এসব বিষয়ে নিজাম উদ্দিন হাজারীর সঙ্গে তার মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তার বিরুদ্ধে যতসব অভিযোগ উঠেছে সবই মিথ্যা বানোয়াট।
মন্তব্য চালু নেই