‘দেশকে অস্থিতিশীল করতে এ হামলা’

দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে জঙ্গি হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র সদস্যরা হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছে। তারা অতীতের ধারাবাহিকতায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে গুলশানের আর্টিজান বেকারির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, এ কথা জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, জিম্মিদের উদ্ধারে অপারেশন থান্ডারবোল্ট নামে কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তিনি বলেন, শনিবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরীর নেতৃত্বে মাত্র ১৩ মিনিটের মধ্যে যৌথবাহিনী দক্ষতার সঙ্গে সকল সন্ত্রাসীকে পরাভূত করে আর্টিজান বেকারিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এতে সেনাবাহিনী ছাড়াও বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অংশ নেন।

জঙ্গি দমনে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এ কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সকল প্রকার জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও জঙ্গিদের নির্মূলে সরকার কাজ করছে। এজন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জঙ্গি দমনে প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর প্রয়োজনীয় সহায়তা নেওয়া হবে।’

এ সময় জঙ্গি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে দেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর জোর দেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, দেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো হীন স্বার্থ কায়েম করতে দেশের কোমলমতি ছাত্রদের বিপথগামী করছে। ধর্মের নামে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সঠিক ধর্মচর্চার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। নিরীহ মানুষ খুন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ধর্মের দোহাই দিয়ে সন্তানদের যাতে এসব জঙ্গি গোষ্ঠী বিপথগামী করে অকাল মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে না পারে, সেজন্য অভিভাবক ও সর্বস্তরের মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ এর হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় এক দল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এলাপাথারি গুলিবর্ষণ করতে করতে অতর্কিত প্রবেশ করে। এ সময় তারা রেস্তোরাঁয় অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক ও অন্যদের জিম্মি করে। খবর পেয়ে গুলশান থানার পুলিশ দ্রুত সেখানে যায়। রেস্তোরাঁয় ঢুকতে চাইলে পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে সাব-ইন্সপেক্টর ফারুকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর ঘটনাস্থলে আরো টহল পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ গিয়ে রেস্তোরাঁর চারদিকে ঘিরে ফেলে। এ সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ক্রমাগত গুলি ছুড়তে থাকলে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এ সময় জঙ্গিদের ছুড়ে মারা গ্রেনেডে ডিবির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল করিম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন খান মারা যান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই