দুর্বল হয়ে পড়েছে বিএনপির কূটনৈতিক উইং

বিএনপির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠতে দলের কূটনৈতিক উইং ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এর অংশ হিসেবে বিএনপির ফরেন অ্যাডভাইজরি কমিটিতে আনা হচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরীর দল ছাড়ার পাশাপাশি রিয়াজ রহমান, ড. এম ওসমান ফারুক ও শফিক রেহমানের নিষ্ক্রিয়তায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগে টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না হওয়াকে দলের কূটনৈতিক উইংয়ের বিপর্যয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বাংলাদেশ সফরের সময় তার সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সাক্ষাৎ হলেও দেখা পাননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
ফিলিস্তিন দূতাবাস সূত্র জানায়, তাদের কর্মসূচিতে বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচি ছিল। কিন্তু বিএনপির কূটনৈতিক যোগাযোগে ঘাটতি থাকায় এ বৈঠক হয়নি। অবশ্য এ বিষয়ে সরকার পক্ষ থেকেও তারা কোনো সবুজ সংকেত পাননি বলে সূত্র জানায়।

বিএনপির কূটনৈতিক অঙ্গনে কাজ করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি দলের কূটনৈতিক উইংয়ের বর্তমান অবস্থা মানতে রাজি নন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির কূটনৈতিক উইং ভেঙে পড়েছে এটা ঠিক নয়। কেউ অসুস্থ থাকতে পারে। কারও ব্যক্তিগত অসুবিধাও থাকতে পারে। তার মানে এই নয়, বিএনপির উইং দুর্বল হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে এখনো এমন অনেক নেতা রয়েছেন যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম। আমাদের অনেক তরুণ নেতাও কূটনৈতিক উইংয়ে কাজ করছেন।’ খবর বাংলাদেশ প্রতিদিন’র।

সূত্রমতে, কূটনৈতিক উইংয়ে গতি আনতে নতুন নেতৃত্বের একটি তালিকা সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বেগম জিয়ার নিজেরও কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। খুব শিগগিরই পররাষ্ট্রবিষয়ক পরামর্শক কমিটি পুনর্গঠন করে দেবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের বর্তমান সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
তবে বিএনপির কূটনৈতিক উইং এখনো কোনো যোগসূত্র স্থাপন করতে পারেনি।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভেঙে পড়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইং। এখনো ওই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি দলটি। দলের পক্ষে কাজ করা পাঁচজন কূটনৈতিক নেতা এখন নিষ্ক্রিয়। সর্বশেষ গত সোমবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে ব্রিটেনের তিন এমপির সাক্ষাতের সময় দেখা যায়নি পেশাদার কূটনৈতিক ওইসব নেতাকে। ওই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টুও কাজ করেন দলের ফরেন অ্যাফেয়ার্সে। তিনি জানান, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই আমাদের কূটনৈতিক উইংয়ের বৈঠক হচ্ছে না। শিগগিরই এর বৈঠক হবে। তখনই কূটনৈতিক উইংয়ের নানা বিষয় নিয়ে কথা হবে। ১৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বড় অংশই ছুটিতে থাকবেন। তবে এও ঠিক, বিএনপিকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে। ’

বিএনপির কূটনৈতিক-সংশ্লিষ্টরা জানান, দলের পক্ষে কাজ করা দক্ষ কূটনীতিক রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।

এরপর গ্রেফতার হন দলের আরেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী। একপর্যায়ে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে দলও ছাড়েন তিনি। তার দল ছাড়ার পর কূটনৈতিক উইংয়ে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয়।

গত বছরের মাঝামাঝি গ্রেফতার হন শফিক রেহমান। সম্প্রতি কারামুক্ত হওয়ার পর তিনি বিশ্রামে রয়েছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হলে তিনি পাড়ি জমান বিদেশে। এ মুহূর্তে তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।

আরেক কূটনীতিক নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়ি গুলশানে জ্বালিয়ে দেওয়ার পর তিনিও এখন অনেক সতর্ক। এভাবেই বিএনপির কূটনৈতিক উইং ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, বিএনপির পররাষ্ট্রবিষয়ক অ্যাডভাইজরি কমিটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান। তার অনুপস্থিতিতে এখন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ওই কমিটির সদস্যসচিব মুশফিকুল ফজল আনসারী এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেও দলের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বিষয়াদি দেখাশোনা করছেন।

জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন, মাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আওয়াল, জেবা খান, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ আরও কয়েকজন কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।



মন্তব্য চালু নেই