দুর্বল রাষ্ট্র অন্যভাবে ক্ষমতা দেখাচ্ছে

জনগণকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে মন্তব্য করে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেছেন, আজকে পরিস্থিতি এই দাঁড়িয়েছে যে রাষ্ট্র বলে এক অদ্ভুত বিষয়কে চিন্তা করা হচ্ছে। যেখানে শুধুমাত্র যারা ক্ষমতায় থাকবে তারাই মালিক। এর বাইরে যারা আছে সবাই অরাষ্টীয়। কখনো কেউ রাষ্ট্রবিরোধী বা রাষ্ট্রদ্রোহী। আজকে জনগণকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। রাষ্ট্র তো জনগণ ছাড়া হতে পারে না।

বুধবার (২০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, যারা সরকার দলের বাইরে আছে নিশ্চিতভাবে তাদের সবাইকে রাখা হচ্ছে রাষ্ট্র্রের বাইরে। রাষ্ট্রের সংজ্ঞার মধ্যেই তো বলা আছে যে, জনগণ রাষ্ট্রের অত্যন্ত জরুরি ও মূল্যবান উপাদান। সেই জনগণকেই তো বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। সেই রাষ্ট্রকেই তো খণ্ডিত করা হয়েছে। সেদিক থেকে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি কেউ যখন দুর্বল থাকে, তখন সে সবসময় অন্যভাবে তার ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করে। এবং তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে। আজকে আমাদের রাষ্ট্র সেই একই কাজ করছে।

‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহঙ্কার’ কথাটি অমরা সবসময় বলি। কিন্তু বলি কীসের জন্যে? ব্যক্তিগত স্বার্থে, সামাজিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য, রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। অর্থ্যাৎ আমরা উত্তরাধিকার বেচে বেচে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চাই। আজকে সময় এসেছে সেই জায়গায় রুখে দাঁড়ানোর। যোগ করেন সুলতানা কামাল।

উল্লেখ্য যে, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৫নং সাপমারা ইউনিয়নের রামপুর, সাপমারা, মাদারপুর, নরংগাকাদ ও চকরাহিমপুর মৌজার ১৮৪২.৩০ একর ভূমি রংপুর সুগার মিলের জন্য অধিগ্রহণের নামে কেড়ে নেয় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকার। এর ফলে ১৫টি আদিবাসী গ্রাম ও ৫টি বাঙালি গ্রাম উচ্ছেদ হয়। সেই চিনি কল অব্যবস্থাপনার কারণে ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। চিনিকল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে সেই জমি প্রভাবশালীদের কাছে ইজারা দিতে শুরু করে। জমিগুলোতে বর্তমানে আখের পরিবর্তে ধান, গম, সরিষা, আলু ইত্যাদি চাষ করা হচ্ছে। বাস্তুচ্যুতরা ঘটনাটি প্রশাসনের নজরে আনে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৩০ সার্চ মাসে গাইবান্ধা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন যে এই ভূমিতে যেন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার। সেই থেকে নিজেদের জমি ফিরে পেতে আদিবাসী ও বাঙালিরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঐক্যন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টচার্য, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, অধ্যাপক সাদেকা হালিম প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই