দু`মাসে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১০ মাসে ৫৫ শতাংশ এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বাস্তবায়ন করতে পেরেছে সরকার।

এ সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ করতে পেরেছে ৪১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে ৪৫ শতাংশ বা ৩৩ হাজার ৪০৬ কোটি ব্যয় করতে হবে সরকারকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নেও কোনো ভিন্নতা বা নতুনত্ব আসেনি। হয়নি গুণগত পরিবর্তন। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র একই। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দাতাদের অর্থছাড়ে বিলম্বসহ বিভিন্ন সময়ে নানা অজুহাত দেখানো হলেও সংশ্লিষ্টরা প্রধানত একটি কারণকেই দায়ী করছেন। এখনো বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব রয়েই গেছে।

ফলে এডিপি বাস্তবায়নে গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একই সঙ্গে থাকছে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের শঙ্কা। তড়িঘড়ি করে এডিপি বাস্তবায়নের ফলে থেকে যাচ্ছে মানহীন। প্রথম দিকে উন্নয়ন বরাদ্দের ব্যয় নিয়ে গড়িমসি থাকলেও বছরের শেষের দিকে এসে অর্থ ব্যয়ের হিড়িক পড়ে যায়। দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা এ প্রক্রিয়া চলতি অর্থবছরেও চলমান রয়েছে।

বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ তথ্যানুসারে, এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে সংশোধিত এডিপিতে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ১৪ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বৈদেশিক ঋণ থেকে।

এ বছর উন্নয়ন বাজেটে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ হিসেবে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে অর্থবছরের বাকি দুই মাসে (মে-জুন) ৩৩ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে।

মার্চ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪৩ শতাংশ। এ হিসাবে এক মাসে এডিপি বাস্তবায়ন বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। ফলে আগামী দুই মাসে বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন অসম্ভব বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

বছরভিত্তিক এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘুরেফিরে একই ঘরে রয়ে গেছে এডিপি বাস্তবায়নের অবস্থা। গত বছর এ সময়ে চলতি বছরের মতোই ৫৫ শতাংশ সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। এর আগের বছর ৫৪ শতাংশ, তার আগের বছর ৫৫ শতাংশ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে এই সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ৫৮ শতাংশ।

এর আগে ২০১৩ সালে দেশে কাঙ্ক্ষিত ও গুণগতভাবে এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছিল আইএমইডি। এর মধ্যে রয়েছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন সক্ষমতা ও অর্থ সরবরাহের সামর্থের অসামঞ্জস্যতা, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও পরিকল্পনার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, জমি অধিগ্রহণের সমস্যা, বিদেশি সংস্থা থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ সময় মতো না পাওয়া, অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা। কিন্তু দুই বছরেও এসব সমস্যার আর সমাধান হয়নি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুর্শিদ বলেন, সব সময়ই দেখা যায় অর্থবছরের শেষের দিকে এসে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। কেননা প্রথমদিকে এডিপি বাস্তবায়নে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় না। এতে প্রকল্পের গুণগত মান ও অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

আইএমইডি সূত্রে জানা যায়, বাস্তবায়নের হারে খুবই সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে ১৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের। এসব প্রতিষ্ঠানের এডিপি বাস্তবায়ন ৬০ শতাংশের ওপরে।

এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ১০ মাসেই শতভাগের কাছাকাছি। মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন হার ৮২ শতাংশ। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে ১৫টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৩০ কোটি ৬৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা খরচ করতে পেরেছে এ মন্ত্রণালয়।

বাকি ১৯টি বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার অর্থবছরের ১০ মাস পরেও ৫০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে এখনো ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে তিন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আভ্যন্তরীন সম্পদ বিভাগ। প্রতিষ্ঠানের এডিপি বাস্তবায়নের হার যথাক্রমে ১৯, ১৬ এবং ১৩ শতাংশ।

এ ছাড়া সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি বিভাগ ৫৮ শতাংশ হারে এডিপি বাস্তবায়ন করতে পেরেছে। গত মাসে এ হার ছিল ৪৫ শতাংশ। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অনুকূলে মোট এডিপির ৭১ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এর বাস্তবায়ন হার ৯৬ শতাংশ। এরপরই ৬৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (থোক বরাদ্দসহ) এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।



মন্তব্য চালু নেই