‘দুটো সুটকেস হাতে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা’

আজ ১৭ মে, রোববার। পঞ্জিকার পাতার হিসাবে ১৯৮১ সালের ১৭ মে-ও ছিল রোববার। আজ ঢাকায় বৃষ্টি হবে কি না, তা-ও এখন বলা যাচ্ছে না। কিন্তু ১৯৮১ সালের এ দিনে ঢাকায় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি হয়েছিল। ওই ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখো মানুষ জড়ো হয়েছিল ঢাকার রাজপথে। জড়ো হয়েছিল ভাগ্যগুণে বেচে যাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ৫ বছর ৯ মাস পার করে নানা পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কোলকাতা হয়ে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। পরে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে লাখো জনতার সংবর্ধনার পর শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বলেছিলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাও তার সঙ্গে ছিলেন। ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি ওই সময় দেশে ফিরতে পারেননি। ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পান। এরপর ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫, ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

এদিকে ২০১৪ সালের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খুবই আবেগ আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আমি চিন্তাও করিনি, কোথায় থাকব, কোথায় উঠব। দুটো সুটকেস হাতে নিয়ে ফিরে এলাম। শুধু একটাই চিন্তা, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যখন বাংলাদেশ থেকে যাই, তখন মা-বাবা-ভাই সবই ছিল। রাসেল বিদায় দিতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিল। লাখো মানুষের ভালোবাসা পেলাম। কিন্তু আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে পেলাম না। পেলাম বনানী কবরস্থানে সারি-সারি কবর।

শেখ হাসিনার ৩৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং সমমনা পেশাজীবী সংগঠনগুলো সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোববার ভোরে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় ৩২ ধানমণ্ডিস্থ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। ১৭ মে ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশ, ১৮ মে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিব) আলোচনা, ১৯ মে শ্রমিক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা, ২০ মে কৃষক লীগ ও যুবলীগের আলোচনা সভা, ২১ মে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আলোচনা এবং ২২ মে গণর‌্যালি। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও ভারতের রাজ্যসভায় বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত বিল পাস হওয়ায় আগামী ২৯ মে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শনিবার এক বিবৃতিতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ মযার্দায় পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

কর্মসূচি
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এবার ৭ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শনিবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণে সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলীয়, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। দুপুর আড়াইটায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গঠিত উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নাসিম যায়যায়দিনকে জানান, আগামী ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ মে আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি উদযাপন করবে। এ ছাড়া ২২ মে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। শোভাযাত্রাটি ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে।

এ ছাড়া ১৮ মে দুপুর ১২টায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের উদ্যোগে বিএমএ ভবন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি থাকবেন দলটির নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। একইদিন বিকাল ৪টায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আহ্বান
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে শেখ হাসিনার সুন্দর জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশব্যাপী দোয়া, মিলাদ মাহফিল, বিজয় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।



মন্তব্য চালু নেই