দুই বছরেও ফলাফল শুন্য ইলিয়াস আলী নিখোঁজ রহস্যের

দুই বছরেও কিনারা হলো নাবিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলয়াস আলী নিখোঁজ রহস্যের। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে বনানী এলাকা থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ইলিয়াস আলীকে খোঁজার বিষয়ে তদন্তের ব্যাপারে আদালতে ৩৭টি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। এসব প্রতিবেদনে পুলিশ দাবি করছে, ইলিয়াস আলীকে খোঁজা হচ্ছে।
তবে ফলাফল কার্যত শূন্য। স্বজনরা অভিযোগ করছেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় কোনো তদন্তই হয়নি। তবুও ইলিয়াসের অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে আছেন তারা। বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখনো অভিযোগ করছেন, সরকারই গুম করেছে ইলিয়াস আলীকে। তাই দুই বছরেও রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আইনগত প্রক্রিয়ায় ইলিয়াস আলীকে খুঁজছে পুলিশ।
বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ভূইঁয়া মাহাবুব হাসান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে প্রতি মাসের ১৭ তারিখে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিই। আমরা নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে তদন্ত করছি।’
ওসি ভুইয়া মাহাবুব হাসান আরও জানান, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) হয়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থানা পুলিশ এ ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে বলে দাবি তার। পরে আদালতের নির্দেশে ৪৮ ঘণ্টা পর পর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে ১০ কার্যদিবস পর একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কর্মকর্তা। এখন সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে প্রতি এক মাস পরপর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হচ্ছে। প্রতি মাসের ১৭ তারিখে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
ঘটনার পর র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলে ইলিয়াসের সহকর্মী ও স্বজনরা। র‌্যাবও ইলিয়াসকে উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। তবে কিছুদিন পর থেমে গেছে র‌্যাবের তদন্তের তোড়জোড়। এ ব্যাপারে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি চাঞ্চল্যকর ঘটনাই র‌্যাব ছায়া তদন্ত করে। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায়ও করেছে। সম্ভব্য কয়েকটি স্থানে অভিযানও চালিয়েছে। এ তৎপরতা এখনও আছে। তবে যেহেতু থানায় জিডি হয়েছে, বিষয়টি তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তারাই বলতে পারবে।’
থানা সূত্র জানায়, প্রথম এক বছরে ২৫টি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এরপর থেকে প্রতি মাসে সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে আদালতে আরও ১১টি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আজ ১৭ এপ্রিল আরও একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এসব প্রতিবেদনে পুলিশ দাবি করছে, বিভিন্ন মাধ্যমে ইলিয়াস আলীকে খোঁজা হচ্ছে। প্রতিবেদনে ইলিয়াস আলীর গাড়ির বর্ণনা, ঘটনাস্থলের বিবরণ, মোবাইলের কললিস্টের তথ্য, ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী অবস্থা, নজরদারির কার্যক্রম ও গাজীপুরের পুবাইলে উদ্ধার অভিযানের তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ইলিয়স আলী নিখোঁজের ঘটনা তদন্তের তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। সর্বশেষ তদন্তের দায়িত্বে থাকা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশরাফুল ইসলামকে গত সপ্তাহে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। তাই এখন তদন্তের দায়িত্বেও নেই কেউ। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী মাইনুল ইসলাম। তিনি বদলি হয়ে গেলে মামলার তদন্তভার নেন একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন। এরপর আশরাফুল ইসলাম। বদলি হওয়ার আগে সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে ইলিয়াস আলী নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে তদন্তে কী ধরনের অগ্রগতি হয়েছে, জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তবে ওসি ভূইঁয়া মাহাবুব হাসান স্বীকার করেন, ‘আসলে বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এতো বড় ঘটনা কোনো তথ্য পাওয়া গেলে আদালতে জানানো হতো। আপনারা জানতেন। গোটা দেশ জানতো।’
এদিকে ইলিয়াস আলী যখন নিখোঁজ হন তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল তার একমাত্র কন্যা সন্তান সাইয়ারা নাওয়াল। এখন সে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। গত দুই বছরে বাবার জন্য প্রতীক্ষা শেষ হয়নি তার। বাবার কথা জানতে চাইলে বলে, ‘আব্বু একদিন আসবেই।’ সম্প্রতি বনানীর বাসভবনে গিয়ে উদাস হয়ে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। নাবিদ সাহারা লাবি ও আবরার বোনের কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করছে বারবার। তাদের একটাই দাবি, জীবিত থাকুক বা মৃত হোক তার বাবার সন্ধানটুকু অন্তত জানাক সরকার।
ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ‘প্রথম কিছুদিন খোঁজখবর নিলেও এখন আর র‌্যাব-পুলিশের খবর নেই। তাকে উদ্ধারের কোনো কার্যক্রমই নেই। তারপরও আমরা এখনও আশায় আছি ও (ইলিয়াস আলী) একদিন ঠিকই ফিরে আসবে।’ বর্তমানে সিলেটে রয়েছেন লুনা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকায় দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই