দুই কারণে বিএনপির পিছুটান!
সরকার বিরোধী হুংকার থাকলেও আন্দোলনে নেই বিএনপি! তার বদলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে সাবধানে চলছে দলটি। তবে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির ‘অতিসাবধানী’ অবস্থান ভাবমূর্তি উজ্জল করবে বলে মনে করছেন নেতৃবৃন্দ। সে জন্য রোববার হরতালের সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি কারনে ওই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তারা।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার জনসভার জন্য শেষ পর্যন্ত অনুমতি পায়নি বিএনপি। শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত পিডব্লিউডি ও ডিএমপির কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি না মেলায় রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বরকতউল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বৈঠকে বসেন। প্রায় ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে দলের পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানায় দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।
তাৎক্ষকিভাবে জানানো হয়, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার বেলা ১১টায় নতুন ওই কর্মসূচি ঘোষনার করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে রাতেই জানানো হয়, বেলা ১১টা নয়, দুপুর ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
দলীয় সূত্রটি আরো জানায়, শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের আগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহাসচিবের কক্ষে ফের বৈঠকে বসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
বৈঠকে বর্তমানে দলের পরিস্থিতি এবং চলমান জেএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল সময়োপযোগী হবে না বলে মত দেন নেতারা। এ জন্য হরতালের পরিবর্তে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারনে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য আবারো সংশোধন করতে হয়েছে। সে জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ২০ মিনিট পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলন করে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনসভাটির জন্য গত ৩০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের জন্য পিডব্লিউডির কাছে এবং মাইক ব্যবহারের জন্য ডিএমপির কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে রোববার দেশের সব মহানগরের থানায় থানায় ও জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করবে বিএনপি।
ঢাকা মহানগর বিএনপির দু’জন শীর্ষ নেতা জানান, প্রাথমিকভাবে হরতালের কর্মসূচির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে।
তাছাড়া এই মুহুর্তে হরতাল হলে নেতাকর্মীদের নামে আবারো সহিংসতার অভিযোগে মামলা-হামলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের পূনর্গঠন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। মূলত, ঢাকা মহানগর বিএনপি পুনর্গঠনের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে হরতাল থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পুলিশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে ভিন্ন আচরণ করছে অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অহরহ সভা সমাবেশ করলেও বিএনপিকে কোনো জায়গায়ই পুলিশ অনুমতি দেয়না। পুলিশ এতটাই ক্ষমতাধর হয়ে গেছে যে বিএনপিকে মিছিল পর্যন্ত করতে দেয়না।
বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা না দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একের পর এক অহিংস কর্মসূচিতে বাধা দিলে এক সময়ে ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাবে। আশা করি, ভবিষ্যতে সরকার বিএনপির গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা না দিয়ে সহযোগিতা করবে।’
মন্তব্য চালু নেই