‘দুই উপজেলাবাসীর নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা বাশের সাাঁকো’

কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা : নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার ঘোষগ্রাম-আন্ধার কোটা নামক স্থানে ছোট যমুনা নদীর উপর দিয়ে চলাচলের জন্য এলাকাবাসীর উদ্যোগে বাশের সাঁকো নির্মান করায় রাণীনগর ও আত্রাই দ’ু উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। তাই মানুষের মাঝে যোগ হয়েছে নিবিড় বন্ধন। আত্রাই উপজেলার বিল বেষ্টিত কালিকাপুর ইউ’পির অবহেলিত জনপদের মধ্যে আটগ্রাম, হরপুর, তারানগর, বাউল্লাপাড়া, ঝিয়াড়িগ্রাম, শলিয়া গ্রামসহ রাণীনগর উপজেলার কৃষ্ণপুর, মালঞ্চি, ঘোষগ্রাম, নান্দাইবাড়ি, বেতগাড়ী গ্রামের প্রায় ৫হাজার লোকের বসবাস হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্টের অনেক জরুরী সুযোগ সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এই দুই উপজেলার কয়েক গ্রামবাসি। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে স্বাধীনতার ৪৫বছর পার হলেও নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর উপর দিয়ে পারাপারের জন্য রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রাম ও আত্রাই উপজেলার আন্ধার কোটা নামক স্থানে নদীর উপর একটি ব্রীজ তৈরির অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাশের সাাঁকো অথবা নৌকা দিয়ে পারাপার হয় প্রায় ৯টি গ্রামের কৃষক-শ্রমিক, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ প্রায় ৫ হাজার জনগণ। বর্ষাকালে নৌাকায় নদী পারাপার হলেও নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে এলাকাবাসির উদ্যোগে তৈরি বাশের সাঁকোই এক মাত্র যোগাযোগের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।

সুত্র জানায়, রাণীনগর উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিনে সীমান্ত ঘেষা ও আত্রাই উপজেলার সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে বুক চিড়ে বয়ে গেছে নওগাঁর ছোট যমুনা নদী। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরের বেশি সময় ধরে বন্যার পানি চারিদিকে ঘিরে থৈই থৈই করে। তখন পারিবারিক প্রয়োজনে যাতায়াতের এক মাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় ভাড়ায় চালিত নৌকা। কিন্তু শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই বিলের পানি কমতে থাকায় পানি-কাদায় একাকার হওয়ায় পায়ে হেঁটেই উপজেলার আটগ্রাম, হরপুর, তারানগর, বাউল্লাপাড়া, ঝিয়াড়িগ্রাম, শলিয়া গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে জেলা ও উপজেলা সদরে যেতে হয়। নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকা ঘোষগ্রাম-আন্ধার কোটা নামক স্থানে নদী পারাপারের জন্য একটি বাঁশের সাঁকোর উপরই ভরসা করতে হয়। যানবাহন চলাচলের উপযোগী সরাসরি কোন পথ না থাকায় আত্রাই উপজেলার ওই গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি ইরি ধান উৎপাদন এলাকা হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধানসহ অন্যান্য কৃষি পন্যসামগ্রী সহজ ভাবে বাজারজাত করতে না পারায় নায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে মোটা অংকের লোকসান হয়। অনেকটা বাধ্য হয়েই ফরিয়া ও মহাজনদের কাছে চলমান বাজার মূল্যের চেয়ে কমদামে কৃষি পন্য বিক্রি করতে হয়। এখানে একটি ব্রীজ নির্মানের এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি থাকলেও প্রকল্প আসে প্রকল্প যায় এই এলাকাবাসির ভাগ্য উন্নয়নের কারো যেন মাথা ব্যাথা নাই। অথচ উক্ত স্থানে ব্রীজটি নির্মান করা হলে রাণীনগর-অত্রাই উপজেলার ওই এলাকায় বসবাসরত মানুষের যাতায়াতের জন্য নতুন দিগন্তের উন্মচন ঘটবে। আত্রাইয়ের কালিকাপুর ইউনিয়নের বেশি এলাকা বন্যা কবলিত হওয়ায় মাঝে মধ্যে শুস্ক মৌসুমে যমুনা নদীর পশ্চিম তীর দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করা হলেও বন্যার দাপটে আর নদী ভাঙ্গনের কবলে প্রতি বছরই তা ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে যায়। গ্রামের পাশে পাকা সড়ক না থাকলেও এলাকাবাসি ভাঙ্গাচুড়া কাদা পানি আর মেঠো পথে চলতেই বেশি পছন্দ করে।

এখানে প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, ও ফ্লাড সেন্টা আছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সাথে উল্লেখ করার মতো কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। মাতৃকালিন সেবা নিতে আসা মা বোনদের বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক কষ্ট করে আসতে হয়। আত্রাই উপজেলার আন্ধার কোটা গ্রামের মহিদুল ইসলাম (৪৫), ডাঃ আব্দুল জব্বার (৬৬), রাণীনগর উপজেলার নান্দাই বাড়ি গ্রামের এচাহক আলী (৫২) জানান, এখানে একটি ব্রীজ না থাকায় দুই পারের মানুষেরই চলাচলের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটাসহ আনা নেওয়া খুব অসুবিধা হয়। তাই একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে সবাই উপকৃত হবে।

আটগ্রাম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ ইউনিস আলী জানান, আমি দীর্ঘ দিন এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করে আসছি। সরকারি প্রাথমিক, উচ্চ বিদ্যালয়, ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি ঝড়-বৃষ্টি বন্যার সময় অনেক কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি ব্রীজের অভাবে নৌকা কিংবা বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হয়ে স্কুলে আসে। তাই নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর উপর ঘোষগ্রাম-আন্ধার কোটা নামক স্থানে একটি ব্রীজ নির্মান করা হলে এই এলাকার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সবাই উপকৃত হবে।

আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আলাউদ্দিন জানান, শলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ হইতে অন্ধার কোটা পর্যন্ত পাকা সড়ক এবং ছোট যমুনা নদীর উপরে একটি ব্রীজ নির্মানের জন্যযাচাই বাচাই ও পরীক্ষা নিরিক্ষা চলছে। ব্রীজটি নির্মান করা হলে আমার ইউনিয়ন বাসিসহ আশেপাশে বসবাসরত সর্বসাধারণের জীবন যাত্রার মান পাল্টে যাবে। তাই এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের দাবি হলেও অদ্যবদি এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় জনগণ অনেক কষ্টে আছে। আমার দাবি স্কুল, মাদ্রাসা ও ইউনিয়ন বাসি তথা সর্বময় জনসাধারণের স্বার্থে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম এম.পিসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সু-নজর কামনা করছি।



মন্তব্য চালু নেই