দীর্ঘ ছয়মাসেও উদঘাটন হয়নি মহেশপুরের সেনা সদস্যের মৃত্যুর রহস্য

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শাহাবাজপুর গ্রামের সেনা সদস্য ওবাইদুল হক (৩৪) নিহত হওয়ার ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে, কিন্তু তার মৃত্যু রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। এ অবস্থায় তার পরিবার হতাশা প্রকাশ করেছে। তাদের প্রশ্ন দেশের একজন তরুন সেনা সদস্যকে খুন করা হলেও কি তার রহস্য মিলবে না?

জানা গেছে ওবায়দুল হক বগুড়ার মাঝিরা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসার জন্য তিনি সেনানিবাস থেকে রওয়ানা দেন। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মোবাইলে ফোন করে নাটোর পর্যন্ত এসেছেন বলে তার বাড়িতে জানান। এরপরে তিনি পাবনার দাশুড়িয়ার মোড় থেকে কুষ্টিয়ার বাস ধরবেন বলেও জানান।

কিন্তু সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের আর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নিহতের ছোট ভাই লিমন জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় সর্বশেষ তার পরিবারের সঙ্গে ওবায়দুলের কথা হয়। এরপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ঘটনার ১৩ দিন পর ১৫ অক্টোবর পাবনা জেলার মাজিদপুর গ্রামে মেইন রোডের পাশের একটি ডোবা থেকে ওবাইদুলের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওবাইদুলের নিখোঁজের ঘটনা তার কর্মস্থলে জানানোর পর গত ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় বগুড়া সেনানিবাসের ওয়ারেন্ট অফিসার আসগর আলী বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তার লাশ উদ্ধারের পর ১৬ অক্টোবর তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে মামলাটি পাবনা সদর থানার এসআই অরবিন্দ কুমার তদন্ত করলেও পরবর্তীতে পাবনার সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

বর্তমান সিআইডি কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আব্দুল আজিজ মামলাটি তদন্ত করছেন। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সিআইডি কর্মকর্তা (পরিদর্শক) আব্দুল আজিজ জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কোনো কারণ দেখানো হয়নি। পুলিশকে তদন্ত করে বের করতে বলা হয়ছে। ভিসারা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটির আইএমই নম্বর পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। যদি মোবাইল ফোনটি ব্যবহৃত হয়, তাহলে হয়তো কোনো কিছু বের হতে পারে। এ ছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা নিহত ওবায়দুল ঘটনার দিন বিআরটিসি বাস যোগে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এসেছিলেন। বিআরটিসি বাসের এক হেলপার র‌্যাবকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। কিন্তু কালিগঞ্জ আসার পর কিভাবে তিনি নিখোঁজ হলেন এ ব্যাপারে র‌্যাব বা পুলিশ তথ্য দিতে পারেনি। এছাড়া পরিবারের দাবি, সুরহতাল রিপোর্টও তাদের জাননো হয়নি।

এদিকে মৃত্যুর দীর্ঘ ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মৃত্যু রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে পরিবারের। কারও সাথে ওবায়দুলের কোনো শত্রুতা আছে কিনা এব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহতের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। নিহত ওবায়দুল হকের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় পরিবারে মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

এদিকে নিহত সেনা সদস্য ওবাইদুল হকের পরিবারে এখনো শোক বিরাজ করছে। স্ত্রী আসমা খাতুন স্বামীর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ওবাইদুলের চার বছরের শিশু সন্তান সৈকত মায়ের কান্না দেখে সেও কান্নাকাটি করে। পরিবারে একমাত্র উপর্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পিতা শুকুর আলী ও মা লিপি খাতুন সন্তানের স্মৃতি আকড়ে ক্রন্দন করেন।



মন্তব্য চালু নেই