দিল্লিতে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষনের শিকার বাংলাদেশির লাশ দেশে ফিরেছে

মা-মেয়েকে নিয়ে ভারতের খাজা বাবা মঈনুদ্দিন চিসতী (র.) রওজা আজমির শরিফের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন বাংলাদেশের নার্গিস খাতুন (৩২)। কিন্তু যাওয়া হল না তীর্থস্থানে। পথে দিল্লিতে চলন্ত ট্রেনে ধর্ষনের শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হল নার্গিসকে। সোমবার ভারত থেকে ফেরত আসে নার্গিসের গলিত নিথর দেহ।

নার্গিস খুলনা নিউ মার্কেট এলাকার আবুল কালামের স্ত্রী।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, নার্গিসকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় ট্রেন কর্মচারীরা। আগ্রা মেডিক্যাল মর্গে রাখা হয় লাশটি। দীর্ঘ ৪০ দিন পর সোমবার সকালে হতভাগ্য নারীর গলিত নিথর দেহ বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠায় ভারত সরকার।

ওপারের পেট্টাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং বিএসএফ সদস্যরা বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশ ও বিজিবির কাছে লাশ হস্তান্তর করেন। ইমিগ্রেশন উপপুলিশ পরিদর্শক আনিস ও হাসানুজ্জামান লাশটি গ্রহণ করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় স্বজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

গত ৯ মার্চ বেনাপোল পেট্টাপোল স্থলপথে পাসপোর্ট যোগে আজমির শরিফের উদ্দেশ্যে রওনা হন নার্গিস। সঙ্গে ছিলেন তার মা খুলনা মহানগর সোনাডাঙ্গার ৩/১ কেডি এপ্রোচ এলাকার শাহবুদ্দিন আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম এবং নার্গিসের কন্যা কাকলী (৯)। কলকাতার হাওড়া থেকে ট্রেনে ওঠেন তারা। ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৩টার দিকে দিল্লি কানপুর স্টেশনে নেমে পড়েন তারা তিন জন। ট্রেনে থাকা ল্যাগেজ নিতে গিয়েই নার্গিস আর ফিরতে পারেননি। লাল পতাকাবাহী ট্রেনের বগিত থাকা গার্ডরা তাকে কাপড় দিয়ে মুখ চেপে বগিতে তুলে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়।

এ সময় তার মা ও কন্যা চিৎকার দেয়, ‘ওকে বাঁচান, ওকে ছেড়ে দেন।’ কেউ শোনেনি তাদের চিৎকার। ১৬ মার্চ অবৈধ পথে তার অন্ধ মা ও কন্যাকে বাংলাদেশে পাঠায় সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। ছয়দিন পর মারা যান নার্গিস।

১৯ মার্চ তারিখে খুলনা সোনাডাঙ্গা থানায় ক্ষতিপূরণসহ লাশ ফেরতের দাবিতে জিডি করেন আনোয়ারা বেগম। সেদিন খুলনা মেট্রোপলিটন বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারের দফতর-৪৬/৯৩ স্মারকে জানায়, নতুন দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশি নারীর লাশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩০ মে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, হাইকমিশনসহ বিভিন্ন দফতরে কপির অনুলিপি পাঠানো হয়। খুলনা বিশেষ পুলিশ সুপার বরাবরও আবেদন করা হয়।

আগ্রা মেডিক্যাল মর্গ থেকে ফোনে নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের জন্য ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয় বলে জানান নিহতের বোন আবুল কাশেমের স্ত্রী রাহেলা বেগম।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের অন্ধ মা আনোয়ারা ও কন্যা কাকলী। আর্তনাদ করে অন্ধ মা বলেন, ‘কী দোষ ছিল আমার মেয়ের। সে ভারতে গিয়ে কেন ফিরল লাশ হয়ে? আমরা এর বিচার চাই।’

পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান ও বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ওসি আসলাম খান জানান, ভারত থেকে এক বাংলাদেশি নারীর লাশ এসেছে। দু’দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাইকমিশনার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের চিঠি চালাচালির পর বাংলাদেশে এসেছে লাশটি। হস্তান্তর করা হয়েছে তাদের পরিবারের কাছে।



মন্তব্য চালু নেই