দালালদের সহায়তায় বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বিজিবি’র অতিরিক্ত কড়া নজরদারি থাকার পরও দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা রাতের আঁধারে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে শরণার্থী শিবিরে ঢুকছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ নারী ও শিশু।

মঙ্গলবার ভোর রাতে প্রায় ২৫টি পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গা কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা স্বীকার করেছেন। এসব রোহিঙ্গারা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ও পরিশ্রমে কাতর হয়ে পড়েছে।

সকাল ১১ টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে ঘুরে দেখা যায়, বস্তি সংলগ্ন পাহাড়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে সীমান্ত পার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের তাদের বাড়িঘরে নিয়ে যেতে। এ সময় বিজিবি সদস্যরা ওইসব রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে বস্তির পাহাড়ে অবস্থান নেয়।

এসময় রোহিঙ্গা বস্তির বাসিন্দা আবু তৈয়ব নামের এক রোহিঙ্গা জানায়, আজ ভোর রাত থেকে যে সব রোহিঙ্গা স্বপরিবারে এসেছেন, তারা বস্তির বিভিন্ন বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। পরে আবু তৈয়বের সহযোগীতায় অনুপ্রবেশকারী ১১ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়।

মোহাম্মদ হাসেম (৩০) নামের এক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জানায়, তারা মংডু কেয়ারী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। মিয়ানমার সেনা সদস্যরা তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় ৪০ দিন যাবত বিভিন্ন বন জঙ্গলে অবস্থান নেওয়ার পর প্রায় ৬ মাইল পাহাড়ী পথ অতিক্রম করে উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে কুতুপালং বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

কিভাবে সীমান্ত পার হলেন জানতে চাইলে ওই রোহিঙ্গা জানান, তারা নৌকা ভাড়া করে নাফ নদী পার হয়ে সেখান থেকে গাড়িতে করে কুতুপালং পৌঁছেছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছেন তার স্ত্রী আরেফা বেগম (২৫), মেয়ে নুর কেয়াস (১০), ফায়সাল (০৮), নইমা (৭), কবুরা (৫), কাবিনা আকতার (২), মা সবে মেরাজ (৫৫), ভাই জহিরুল ইসলাম (২৫), মোহাম্মদ রফিক (১৮) ও বোন সমুদা খাতুন (১৯)।

এসময় আরো বেশ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে কামাল আহমদ (৪৫) নামের এক রোহিঙ্গা নাগরিক জানান, তারা একসাথে ২০ পরিবারের শতাধিক রোহিঙ্গা উনচিপ্রাং সীমান্ত দিয়ে এপারে এসেছে।

এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, গত ২ দিনে ৩৫ পরিবারের প্রায় আড়াই শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক কুতুপালং বস্তিতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তিনি বিষয়টি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েছেন। তবে এখনো কোন প্রকার দিক নির্দেশনা আসেনি।

কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্প ইনচার্জ আরমান শাকিল বলেন, তার ক্যাম্পে যেন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি’র অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, দালাল চক্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। বিশেষ করে উনচিপ্রাং এলাকায় বিজিবি’র চৌকি না থাকার কারণে রোহিঙ্গারা এপথটি নিরাপদ মনে করে উনচিপ্রাং দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে।

তিনি দালালদের চিহ্নিত করে জানানোর জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।



মন্তব্য চালু নেই