দরোজায় করা নাড়ছে মেট্রোরেল

মেট্রোরেল এখন স্বপ্নের দরজায় প্রবেশ করছে। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা মেট্রোরেল প্রকল্প ডিমো নির্মাণের শুভ উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং ২০২০ সালের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হবে। ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহর করতে পারবে এই রেল। ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যাতায়াত করতে পারবে যাত্রীরা এবং ৫ মিনিট পর পর এই রেল চলবে বলে মন্ত্রী জানান।
রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল বলরুমে জাপানের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পারি লিমিটেড এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
২০.১০ কিলোমিটার (এলিভেটেড) মেট্রোরেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান টোকিও কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর পক্ষে জিএম হিরোশি আশকামি এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মো. মোফাজ্জেল হোসেন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানীর উত্তরায় তৃতীয় পর্বে নির্মাণ করা হবে মেট্রোরেলের ডিপো। এজন্য ডিপোর মাটির গুণগত মানোন্নয়ন করতে হবে। বাড়াতে হবে ভূমিকম্পে সহনীয়তার ক্ষমতাও। এতে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ৫৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কিছুটা যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। শিশু জন্মকালীন মায়ের প্রসব বেদনা সহ্য করতে হয়। জন্মকালীন যন্ত্রণা হবেই। বাংলাদেশে এই প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উত্তরার মাটির গুণগত মান খুবই খারাপ। ভূমিকম্প সহনীয়তা শক্তিও অনেক কম। এজন্য ডিপোর মাটির গঠন উন্নয়নে গত বছর এপ্রিলে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৮টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যাচাই-বাছাই শেষে টোকিও কনস্ট্রাকশনকে ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।’
ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বাকি ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেলে যাত্রী ওঠা-নামায় স্টেশন থাকবে ১৬টি।
প্রকল্প পরিচালক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘মেট্রোরেলের ডিপো নির্মাণে যে পরিমাণ জমি দরকার ঢাকার ভেতরে তা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে উত্তরাতে ডিপো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে জমির গুণগত মান খারাপ হওয়ায় বুয়েটের মতামত নেয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সেন্ড পাইলিং ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ডিপোর মাটি উন্নয়নে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। জাইকার অনুমোদনও পাওয়া গেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরে দ্রুত কাজ শুরু হবে। আর আগামী বছর এপ্রিলের মধ্যে ডিপোর মাটি উন্নয়নের কাজ শেষ হবে।’
জানা গেছে, মেট্রোরেলের ডিপোর মাটির গুণগুণ পরীক্ষা করা হয় ২০১৪ সালে। তবে গুণগত মান ভালো না আসায় পরামর্শ চাওয়া হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছে। যাচাই-বাছাই শেষে বুয়েট জানায়, উত্তরার মাটি অনেক নরম। এতে ডিপো নির্মাণ করলে যেকোনো সময় তা দেবে যেতে পারে। এছাড়া মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে যেতে পারে পুরো ডিপো। তাই ডিপো এলাকার মাটির শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর ডিপো নির্মাণের জন্য পাইলিং করতে হবে।
বুয়েটের একটি প্রতিবেদনে ডিপো এলাকার মাটির শক্তি বৃদ্ধিতে দুই ধরনের সুপারিশ করা হয়। ৫৪ একরের মধ্যে প্রায় ৩০ একর জমির ৮০-১২০ ফুট মাটি তুলে ফেলতে হবে। এরপর প্রথমে সেন্ড পাইলিং করতে হবে। এক্ষেত্রে বালি ফেলে শক্তিশালী হেমার দিয়ে পিটিয়ে তা লেভেলিং (সমান) করা হয়। এরপর ভালো মানের মাটি দিয়ে উপরের অংশ ভরাট করতে হবে। আর বাকি ২৪ একর এলাকায় নিচের দিকের মাটি কিছুটা শক্তিশালী, তবে ফাঁপা। এক্ষেত্রে উপরিভাগে ৩০-৪০ ফুট মাটি তুলে ফেলতে হবে। এরপর হেমার দিয়ে পিটিয়ে নিচের ফাঁপা অংশ ভরাট করতে হবে। তার ওপর ভালো মানের মাটি ফেলতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই