দখল দূষণে চার নদী: পানির অভাবে ১৯ বছর পর ছাড়তে হবে ঢাকা

নদীর দূষিত পানি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় নগরীর প্রয়োজন মেটাতে যে পরিমান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে এখানকার পানিস্তর। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবনাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ১৯ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।খবর পরিবর্তনের।

এদিকে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নেও কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নদীগুলোর দখল ও দূষণ রোধে সরকারের নীরবতা ভাঙ্গার কথা বলছেন পরিবেশবাদীরা। নদী রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবাদিহির আওতায় আনার পরামর্শ তাদের।

রাজধানী ঢাকা ও এর সংলগ্ন এলাকা নদীবেষ্টিত। চারদিকের এই নৌ-পথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণন ক্রমানুসারে নদীগুলো হচ্ছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা। বিশ্বের যে কোনো দেশের রাজধানী অথবা মেট্টোপলিটন শহরের প্রতি প্রকৃতির এমন আশীর্বাদের দৃষ্টান্ত বিরল। কিন্তু দখল-দূষণের ফলে নদীগুলো সংকীর্ণ হয়ে গেছে। পাশাপাশি পানি এতটাই দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে যে, আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর আশঙ্কা, নদীর দূষিত পানি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় নগরীর প্রয়োজন মেটাতে, যে পরিমান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে প্রতি বছর ১০ ফুট করে নীচে নেমে যাচ্ছে এখানকার পানিস্তর। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবনাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামি ১৯ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাদের পরীক্ষিত ১৩টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানির মান এতটাই খারাপ যে, শুষ্ক মৌসুমে এসব নদীতে কোনো প্রাণ বাঁচতে পারবে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পবা সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, হাইকোর্টের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও ঢাকার প্রাণস্বরূপ বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। ফলে ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল সংলগ্ন মোহম্মদপুর, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, কালুনগর, ভাগলপুর, নবাবগঞ্জ, শহীদনগর, কামালডাঙ্গা, ইসলামবাগসহ এ এলাকার খালগুলোও এখন মরতে বসেছে।

পবার এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভূমিদস্যুরাও নদী-দখলের প্রকৃতি বদলে প্রথমে কাঁচা, পরে সেমিপাকা ও পাকা স্থাপনার মাধ্যমে নদীগর্ভ ও তীরভূমি দখল করছে। বন্দর সংরক্ষক হিসাবে বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও একই এলাকায় বার বার অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ উচ্ছেদকৃত স্থান আবার ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থার (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, নদী দখল দূষণ রোধে সরকারের নীরবতা ভাঙতে হবে। একমাত্র সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে ঢাকার চার নদীকে দখল দূষণ মুক্ত করতে। কারণ সকলেরই জানা কথা নদীগুলো দখল দূষণ হচ্ছে দুর্নীতিবাজ আমলা ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহা পরিচালক আব্দুস সোবহান বলেন, নদী দখল রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার মধ্য দিয়েই সরকার তার নীরবতা ভাঙতে পারে। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাদিহিই পারে নদীগুলো রক্ষা করে ঢাকাকে বসবাসের যোগ্য করতে।



মন্তব্য চালু নেই