থমকে আছে বাংলাদেশ-তুরস্ক বাণিজ্য
তুরস্কের সঙ্গে বাণিজ্য থমকে আছে। বন্ধ আছে নতুন বিনিয়োগও। এ অচলাবস্থা কাটাতে সরকারেরও কোনো উদ্যোগ নেই। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেওয়ার পর তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর সঙ্গে দেশটিতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
সূত্রমতে, জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসি দেওয়ার পর তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওযটুককে প্রত্যাহার করে। তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে আনা হয়েছে। যদিও দুই দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়নি। তবে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে আপাতত তুরস্কে যেতে না দেওয়ার জন্য একধরনের মৌখিক বিধিনিষেধ রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই দুই দেশের বাণিজ্যে অচলাবস্থা আছে কী-না, তা নিয়ে বলছেন অন্যকথা।
এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় বলেন, এখন পর্যন্ত তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো নেতিবাচক কিছু দেখছেন না। এরকম কোনো তথ্যও তাদের কাছে নেই। তুরস্কের সঙ্গে এখনও স্বাভাবিক বাণিজ্যই রয়েছে। বাংলাদেশ তুরস্কে মূলত পাট ও পাটজাত পণ্য, নিটওয়্যার ও ওভেন পোশাক এবং সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে। আর বাংলাদেশের পোশাক খাত, নির্মাণশিল্প ও আসবাবশিল্পসহ বেশকিছু খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিল তুরস্ক। এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকেও দেশের নির্মাণ খাত এবং টেক্সটাইল, পিভিসি পাইপ ইত্যাদি শিল্প খাতে তুরস্কের বিনিয়োগ এবং সে দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, চুড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ তুরস্কে ৭২০ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং তুরস্ক থেকে ১৫৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তুরস্কের এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যান্ড বিজনেস এথিক্স অ্যাসোসিয়েশনের ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। তখন তাদের এফবিসিসিআইর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়। ওই আলোচনায় তুরস্কের ব্যবসায়ী নেতারা দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য আরও সুদৃঢ় করতে আগ্রাহ দেখান।
এ বিষয়ে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেছেন, বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে ৬ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। আর এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় তুরস্ককে সহযোগী হিসেবে পাশে পেতে চায়।২০১০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন তুরস্কের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল্লাহ গ্যুল। সে সময় তিনিও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ঢাকা ও আংকারার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করে একশ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, দেশে বর্তমানে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অধিকতর উৎসাহিত করতে আইনিসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিতে সরকার আন্তরিক। তারপরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কি হয় তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এজন্য বছর খানেক অপেক্ষা করতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই