চট্টগ্রামে রেলসেতু ভেঙে ওয়াগন খালে
তেল ভেসে যাচ্ছে কর্ণফুলীর দিকে, বিপর্যস্ত পরিবেশ
বোয়ালখালী উপজেলায় রেল সেতু ভেঙে ফার্নেস অয়েল বহনকারী একটি ওয়াগনের ইঞ্জিনসহ তিনটি ট্যাংকার খালে পড়ে ব্যাপক আকারে তেল ছড়িয়ে পড়ছে। এতে করে কর্ণফুলী নদীর শাখা খাল বোয়ালখালী খালে ছড়িয়ে পড়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। তবে দুর্ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরও বিষয়টি জানা নেই পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের!
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মফিজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড থেকে ট্যাংক ওয়াগনবাহী ট্রেনটি ফার্নেস অয়েল নিয়ে দোহাজারিতে অবস্থিত ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে যাওয়ার কথা ছিল। পথে বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নে গোমদণ্ডী স্টেশনের কাছে ২৪ নম্বর সাখিরাপুলটি ভেঙে ট্রেনটির তিনটি তেলবাহী ট্যাংকার খালে পড়ে যায় এবং ইঞ্জিন কাত হয়ে হয়ে যায়। এতে করে পানিতে ফার্নেস অয়েল খালে ছড়িয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় রেলওয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট দুই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরাখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া তেল পানিতে পড়ায় এখন আমাদের করার কিছুই নেই। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।’
এদিকে জানা যায়, প্রতিটি ওয়াগনে ২৬ হাজার ৮শ লিটার করে ফার্নেস অয়েল ছিল। সে হিসাবে ৮০ হাজার ৪শ লিটার ফার্নেস অয়েল পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
স্থানীয় সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ জানান, যেখানে তেলবাহী ওয়াগনটির দুর্ঘটনা হয়েছে, সেটি কর্ণফুলীর শাখা খাল হিসেবে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশেছে। ফলে ট্যাংকার থেকে তেল পড়ে এখানকার অনেক জমি, খাল ও নদীতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ বালতি নিয়ে তেল সংগ্রহে নেমে পড়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হক বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল আমি পরিদর্শন করেছি। খালে তেল ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এখন এই খালের বিশাল অংশে ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে। এটি কর্ণফুলী নদীতে গিয়েও মিশবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘ফার্নেস অয়েলের কারণে খালের পানিতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে জীববৈচিত্র্য নষ্ট করবে। ফসলি জমির ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রভাব পড়বে। যে পরিমাণ তেল ছড়িয়ে পড়েছে এতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফার্নেস অয়েল খাল হয়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লেয়ার সৃষ্টি করবে। এতে ওই এলাকার ক্ষুদ্র জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে, শুধু নদীতে নয় ওই এলাকার মাটি ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’
এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় ব্যাপকহারে জ্বালানি হিসেবে ফার্নেস অয়েল ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা পর তেল অপসারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি পৃথক ও কার্যকর সেল গঠন করার দাবি জানিয়েছেন এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ।
তবে ঘটনার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পার হতে চললেও বিষয়টি এখনো জানে না পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর। সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মকবুল আহম্মেদ বলেন, ‘কই এ ধরনের কোনো ঘটনার খবর তো আমরা পাইনি। এটা কোথায় হয়েছে আমাকে একটু বলেন তো।’
ঘটনার বিস্তারিত শুনার পর তিনি বলেন, ‘তাহলে তো পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। আমি এখনই বিষয়টি দেখছি।’
মন্তব্য চালু নেই