তৃতীয় দফা অপারেশন, স্মৃতি ‘ফিরেছে’ খাদিজার

আরেক দফা অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে ভালোভাবে ফিরেছেন সিলেটের কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত মাথার ডান পাশ ও বাম পায়ে সোমবার বিকালে অপারেশন হয়েছে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন এই তরুণীর বাবা মাসুক মিয়া। তিনি জানান, অপারেশন শেষে রাতে তার মেয়েকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রাখা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়।

কেমন আছে আপনার মেয়ে?-

মাসুক মিয়া বলেন, ‘অখন আগের চে বালা। আস্তে আস্তে তার পুরান খথা মনে ফরছে।’

-কেমন?

-‘আগে ইতান কোনো সময় আব্বা কইতো, কুন সময় আঙ্কেল খইতো। এখন আর আঙ্কেল খয় না, আব্বা খয়। ফুরান খথা মনে খরতে ফারে। তবে ডাক্তার সাবে কইছুইন তার ব্রেইনো চাপ পড়বো, এর লাইগ্যা খথা আমরা কম খই।’

গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে চাপাতি দিয়ে খাদিজার মাথায় একের পর এক আঘাত করা হয়। হামলাকারী বদরুলের এই কা- ভিডিও করেছেন একজন। এতো নির্মম হামলার পরও খাদিজা বেঁচে উঠবেন-সে সম্ভাবনা মাত্র পাঁচ শতাংশ দেখেছিলেন চিকিৎসকরা।

৪ অক্টোবর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মাথায় অপারেশন করা হয় খাদিজার। কিন্তু চিকিৎসকরা কোনো আশার কথা বলতে পারছিলেন না। জানান, ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পা নারাতে পারেন খাদিজা। আর অসামান্য জীবনিশক্তি দেখিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন খাদিজা।

১৩ অক্টোবর এই তরুণীর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার পর স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে থাকেন খাদিজা। এরপর ২০ অক্টোবর তার দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করা হয় খাদিজার। এবার অপারেশন হয় হাতে। মাথার কোপ ঠেকানোর চেষ্টায় বাড়িয়ে দেয়া হাতও ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন হামলাকারী বদরুল।

এর আগেই অবশ্য খাদিজার জ্ঞান ফিরে। এক পর্যায়ে বাবাকে চিনতে পারে তিনি। তবে তালগোল পাকিয়ে বাবাকে কখনও আব্বা আবার কখনও আঙ্কেল ডাকতে থাকেন খাদিজা। আবার মাকে একেবারেই চিনতে না পেরে আন্টি বলে ডাকতে থাকেন খাদিজা।

তবে এই অবস্থারও পরিবর্তন হয়ে গেছে এরই মধ্যে। এখন বাবা-মাসহ স্বজনদেরকে চিনতে পারছেন তিনি। কথাবার্তাও বলছেন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে। তবে চিকিৎসকদেও পরামর্শের কারণে স্বজনরা তার সঙ্গে খুব বেশি কথা বলেেছন না।

খাদিজার ওপর হামলার কথা শুনে সৌদি আরব থেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছেন তার বাবা মাসুক মিয়া। চার মাসের ছুটির এক মাস এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। মেয়েটির সুস্থ হয়ে উঠার গতি দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বাবা, আশা করছেন, সৌদি আরব ফেরার আগেই মেয়েকে পুরোপুরি সুস্থ দেখে যেতে পারবেন তিনি।

খাদিজা কেমন আছে জানতে চাইলে স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালটেন্ট মির্জা নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘খাদিজার অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত কথা বলবো।’



মন্তব্য চালু নেই