তীব্র গরমে বরিশালে বাড়ছে শিশু রোগ

দাবদাহ আর প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ বরিশাল অঞ্চলের মানুষ। পুরো মে মাসে বরিশাল জেলায় তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করছে। অসহনীয় গরমে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগে। প্রতিদিনই হাসপাতালে বাড়ছে আক্রান্ত শিশুদের ভিড়। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু ও বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্তএই গরম কমবে না।

এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ, বেশি বেশি করে পানি খেতে হবে। রোদ এড়িয়ে চলার পাশাপাশি খেতে হবে খাবার স্যালাইন। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতিদিনই শিশুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের বেশির ভাগ জ্বর, অ্যাজমা, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে রোগীদের ভিড়। বেশির ভাগই শিশু। বহির্বিভাগে তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সারি। আন্তবিভাগীয় এক শয্যায় ভর্তি দুই থেকে তিনটি শিশু। তারা সবাই গরমের কারণে ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত। বমির কারণে শিশুপুত্রকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন শারমিন জাহান।

বরিশাল সদর উপজেলার এই বাসিন্দা জানান, হঠাৎ তাঁর ছেলের বমি শুরু হয়। এতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন তাঁরা। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে এখানে ভর্তি করেন। পটুয়াখালীর লেবুখালী এলাকা থেকে এসেছেন রেখা বেগম। তিনি জানান, তাঁর দেড় বছরের সন্তানের জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া। তাই দেরি না করে এখানে নিয়ে এসেছেন।

জানতে চাইলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ এম আর তালুকদার মুজিব বলেন, কয়েক দিনের প্রচণ্ড গরমে হাসপাতালে শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই ভাইরাস আক্রান্ত। তীব্র গরম-ঠান্ডায় (হিট র্যা শ) লাল লাল দাগ, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব শিশু। এর সঙ্গে গরমে ঘেমে এক ধরনের অ্যাজমা ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত শিশুও ভর্তি হয়েছে।

তিনি বলেন, গরমে শুধু শিশু নয়, সবারই উচিত বেশি বেশি পানি পান করা। পাশাপাশি স্যালাইন খাওয়া। বাচ্চাদের রোদে বের না হতে পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক। হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেন শিশুবিশেষজ্ঞ সালেহ আল-দ্বীন-বিন-নাসির। তিনি জানান, এখন প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ শিশু হাসপাতালে আসছে। আজও ৩০০ শিশু নিবন্ধন করেছে। তাদের বড় একটি অংশই নিউমোনিয়া, জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে বর্তমানে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান হাসপাতালের সেবিকা জেসমিন আক্তার। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ১০০ থেকে ১৫০ শিশু ভর্তি থাকে। এখন গরমে ২৫০ থেকে ৩০০ শিশু ভর্তি থাকছে। গতকালও ১২২ শিশু ভর্তি হয়েছে।

যোগাযোগ করলে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মো. আবদুল কুদ্দুস বলেন, মে মাসে বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাষ্প ও আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু ও বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত গরম কমবে না বলে দাবী তার।



মন্তব্য চালু নেই