তিস্তার জট এবারও খুলছে না

পর্যটনকে ঘিরেই গোয়ার অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। গোয়ার মূল আকর্ষণ তার সমুদ্র ও সমুদ্র তীর। হলিউড থেকে বলিউড তারকাদের অবসর কাটানোর জায়গা হিসেবে গোয়া আছে তালিকার প্রথম দিকে। গোয়ার বিশাল জলরাশিতে গা ভেজাতে মানুষের ঢল থাকে প্রায় সারা বছরই।

তবে গোয়ার এই বিশাল জলরাশিও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। ভারতের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে কোনো সমাধান আসছে না। গত প্রায় এক বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তিস্তা নিয়ে সমস্যা ভারতের দুই রাজ্যের ভেতরে।

সিকিম ও পশ্চিম বাংলার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। পশ্চিমবঙ্গ বা অধুনা ‘বাংলা’র অভিযোগ সিকিম বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি শুষ্ক মৌসুমে বেশি নিয়ে রাখে। আর বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলার উত্তরবঙ্গে বন্যা দেখা দেয়।

গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল।

বেঙ্গালুরু পলিসি পালস এর কনসালটিং এডিটর বিজয় গ্রেভার এ প্রসঙ্গে বলেন, তিস্তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার বৈঠকে কোনো সমাধান হবে না। রাজ্য সরকারকে মানাতে কোনো কার্যকরী উদ্যাগ নেওয়া হয় নাই বলে জানান তিনি। দু’দেশের চলমান সুসম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চিস্তা নদীর পানি বন্টন সমস্যার সমাধান করা উচিৎ বলে মনে করেন এই সিনিয়র সাংবাদিক।

ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিট এর সংবাদ সংগ্রহে আসা ভারতের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে সম্পর্ক সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। দুটি বিষয়কে সামনে রেখে তিস্তা ইস্যুর সমাধান হওয়া দরকার বলে মত তাদের। এক. তিস্তা জট খুললে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের অবস্থান শক্ত হবে এবং বিরোধীদের মুখ বন্ধ হবে। দুই. বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি সে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন সহজ হবে।

নয়াদিল্লীতে কর্মরত বাংলাদেশি কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকে কোনো ফল হবে না এটা বাংলাদেশ পক্ষও জানে। তবে যত দ্রুত সম্ভব তিস্তা ইস্যু সমাধান হবে এ ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

রোববারের শীর্ষ বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে ভারত ও বাংলাদেশ দু’দেশই একে অপরের পাশে থাকার বিষয়ে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গিদের সমর্থনে পাকিস্তানকে দায়ী করা হচ্ছে। বাংলাদেশে নব্য জঙ্গিবাদের উত্থান এবং ভারতের কাশ্মীরে অব্যাহত জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানকে বিশ্ব দরবারে একঘরে করতে ভারতের উদ্যোগে বাংলাদেশের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে ভারত।

এছাড়া ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর ও বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে ভারত সজাগ রয়েছে। তবে বিষয়টি শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো পক্ষই কিছু বলতে পারেনি।

তবে দু’পক্ষই নিশ্চিত যে, গোয়ার সমুদ্রতটের বৈঠকে তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের জন্য কোনো সুখবর মিলছে না।



মন্তব্য চালু নেই