‘তারেকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ’

লন্ডনে বসে তারেক রহমান হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অভিযোগ করেছেন, সেটিকে উসকানিমূলক ও ভয়ংকর প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে যা বলেছেন, তা শুধু অরুচিকর, কুৎসাপূর্ণ, অসংস্কৃত, উসকানিমূলক ও ভয়ংকর প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশই নয়, তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর বিষাক্ত ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণের এক নতুন দৃষ্টান্ত।

গণগ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারে সৃষ্ট জনক্ষোভ আড়াল করতেই তারেক রহমানকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার এই কুৎসামূলক আক্রমণের গূঢ় রহস্য হচ্ছে- কয়েক দিন ধরে গণগ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ার নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের যে ক্ষোভ জন্মেছে, সেটিকে আড়াল করা। জঙ্গি দমনের নামে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যে হিংস্র পাশবিকতা ও দমন নীতি চালানো হয়েছে এবং ক্রসফায়ারে হত্যায় যে রহস্য দানা বেঁধেছে, সেখান থেকে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লন্ডনে এক কুলাঙ্গার বসে আছে। তাকে আদর দিয়ে ব্রিটিশ সরকার বসিয়ে রেখেছে। ব্রিটিশ সরকার কেন তাকে আশ্রয় দিয়েছে জানি না। সে ওখানে যাওয়ার পর টিউলিপ হুমকি পাচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্ব এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’

রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই, হত্যার জন্য হুমকি-ধমকি এটা বাংলাদেশের শাসক দলের বৈশিষ্ট্য। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে এটি কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। এটি বর্তমানে কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। লন্ডনে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি যদি অন্য কাউকে হত্যার হুমকি দেন, সেই ব্যক্তি কি আইনের হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন?

মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তুলে বলেন, ব্রিটেনের সরকারি দল কি বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের প্রভু হয়ে বসে? ব্রিটেনে কি সরকারি শাসনযন্ত্রকে বাংলাদেশের মতো অপব্যবহার করা যায়? সেখানে শাসনযন্ত্রকে কি দুর্নীতির চক্রে ও উৎপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করা যায়? আইনের শাসনের সেই দেশে বাস করে কীভাবে একজন ব্যক্তি সেখানকার একজন এমপি ও তার মা-খালাকে হত্যার হুমকি প্রদান করবে? সে দেশে তো আওয়ামী শাসন চলে না, আইনের শাসন চলে।

তিনি বলেন, লন্ডনে বসে তারেক রহমান হত্যার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, সেটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ ও বিদেশের কোনো মানুষই কখনোই কোনোদিন শোনেনি। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আক্রোশের কারণটি হচ্ছে- শেখ হাসিনা হাজারো কুৎসা ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর পরও তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মজবুত আসন করে নিয়েছেন, যা অন্য কেউ পারেনি।

তারেক রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী শাসকদের হিংস্র রূপ নগ্ন করার পরও তারেক রহমানকে বিপর্যস্ত ও কাবু করা যায়নি। নানা অপপ্রচারের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে সমস্ত হিংস্রতা দিয়ে তারেক রহমানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েও সরকার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে পাগলের প্রলাপ বকে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অহংকার, ঔদ্ধত্য ও অপরিণামদর্শী। তার এই বক্তব্য দেশের মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। তার এই বক্তব্য দেশের রাজনীতিতে বিচ্ছেদ, বিনাশ ও ব্যবধানের মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। রাজনৈতিক সঠিকতা অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশিদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, সহস্বেচ্ছাবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই