৬৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব

তামিল গেরিলার একদিন

শ্রীলঙ্কায় শেষ হতে চলেছে গৃহযুদ্ধ।

নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে পালাচ্ছে ধীপান। দেশান্তরি হওয়া ছাড়া এবার আর উপায় নেই এই তামিল গেরিলার। পালানোর পথে এই যোদ্ধার সঙ্গী হয়েছে এক নারী আর এক ছোট্ট মেয়ে। এই দুজনকে সঙ্গে রেখেছে ধীপান। একটি পরিবার হিসেবে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায়। শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক হয়েও যায় সবকিছু। প্যারিসে থিতু হয় ধীপান তার পাতানো পরিবার নিয়ে। কিন্তু ধীপান জানত না, এক যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আরেক যুদ্ধের ময়দানে এসে পড়েছে সে। অচিরেই তাকে নামতে হয় তার ‘পরিবার’কে রক্ষার আরেক যুদ্ধে। নৃশংস যুদ্ধের পুরোনো ক্ষত জেগে ওঠে আবারও।

অ্যান্থনিথাসান জেসুথাসান নামের এক তামিল যোদ্ধার সত্যিকার জীবনের গল্প থেকে তৈরি জাক অদিয়ারের ছবি ধীপান। অ্যান্থনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন এলটিটিইতে (লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম)। ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন ধীপান চরিত্রটিতে।

রিড মাই লিপস অথবা আ প্রফেট-এর মতো ছবি করে দুনিয়াজোড়া নাম কুড়িয়েছেন জাক। এবার ফরাসি এই নামী পরিচালকের ছবির বিষয় একেবারেই আলাদা। গল্পের কারণে ধীপান ছবির ভাষাও মূলত তামিল।

‘এ ছবির কাজে হাত দেওয়ার আগে তামিলদের সম্পর্কে আমার একেবারেই কোনো ধারণা ছিল না। আমি মনে করি, ধীপান ভালোবাসা আর বন্ধনের গল্প। তামিল অভিনয়শিল্পীদের আমি ছবিতে নিয়েছি। আমার মনে হয়েছে তারা খুবই ভালো আর ফটোজেনিক।’ কাল কান উৎসবে ছবির প্রচারণায় এসে বলেছেন এই ফরাসি নির্মাতা।

ছবিতে ইয়ালিনি নামে ৩০ বছর বয়সী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কালিয়েশ্বরী শ্রীনিবাসন। জাক অদিয়ারের ছবিতে কাজ করার আগে সিনেমায় অভিনয়ের কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না দক্ষিণ ভারতের এই মঞ্চ অভিনেত্রীর। মঞ্চ থেকে সরাসরি জাক অদিয়ারের ছবিতে।

‘আমার মনে হয়েছে এ অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। ফ্রান্সে কাজ করার পুরো সময়টা অসাধারণ কেটেছে।’ কাল কান উৎসবে ছবির প্রচারণায় এসে বলেছেন কালিয়েশ্বরী। কাল কান উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই ছবির শিল্পীদের উপস্থিতি। এদিকে আগের দিন মাঝরাত থেকে উৎসব সরগরম রেখেছিলেন নির্মাতা গ্যাসপার নোয়ি একাই।

মাঝরাতের সিনেমা!: গভীর রাতে গ্র্যান্ড থিয়েটারের সামনে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য। কানে সময় রাত ১২টা গড়িয়েছে। খানিক পরপর ঠান্ডা বাতাস বইছে। কিন্তু সেসবে যেন কুছ পরোয়া নেই কারও। উঠতি তরুণ থেকে মধ্যবয়সী ভদ্রলোক। অপরূপা তরুণী থেকে দুঁদে সমালোচক। শুধু সারি সারি মানুষ আর মানুষ। পাক্কা দুই ঘণ্টা আগে থেকে অধীর অপেক্ষা। গ্যাসপার নোয়ির লাভ দেখার আশায়। এবার উৎসবের বহুল প্রতীক্ষিত ত্রিমাত্রিক ছবি লাভ।

ইররিভারসিবল আর আই স্ট্যান্ড অ্যালোন-এর ছবির সুবাদে এই ছবির নির্মাতা গ্যাসপার নোয়িকে জানতাম। কিন্তু আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া এই নির্মাতা যে ফ্রান্সে বিপুল জনপ্রিয়, সেটা না দেখলে বিশ্বাস হতো না। মাত্রাতিরিক্ত যৌনতায় ভরা লাভ গ্যাসপারের পুরোনো ভক্তদের খানিকটা হতাশ করলেও উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে গ্যাসপার ছিল প্রধানতম আলোচিত ঘটনা। বিরতিহীন করতালি আর দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন বরাদ্দ ছিল খ্যাতিমান নিরীক্ষাধর্মী এই নির্মাতার জন্য।

আসছে ‘ম্যাকবেথ’: লাভ ও ধীপান ছাড়াও কাল কান উৎসবে প্রদর্শিত নানা বিভাগের ছবির মধ্যে ছিল কমোরা, দ্য আদার সাইড এবং ভ্যালি অব লাভ। উৎসবের বড় আকর্ষণ হিসেবে থাকা ছবির তালিকা ফুরিয়ে এলেও শেষ বড় আকর্ষণ হিসেবে এখনো অপেক্ষা করছে অস্ট্রেলীয় পরিচালক জাস্টিন কুরজেলের ম্যাকবেথ। মারিয়োঁ কোতিয়ার ও মাইকেল ফাসবিন্ডার অভিনীত এ ছবির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে আগামীকাল।



মন্তব্য চালু নেই