তনু হত্যায় ফেঁসে যাচ্ছেন ডা. শারমিন

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার আলামত লুকানোর কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মী। কী কারণে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনু হত্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা যায়নি তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

এর পেছনে কোনো চাপ, প্রলোভন, অন্য কোনো কারণ বা দায়িত্বে অবহেলা ছিল কি-না তাও খুঁজে বের করবে সিআইডি। স্পর্শকাতর এ হত্যা মামলার ঘটনায় ময়নাতদন্তে ডা. শারমিনের কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে ফৌজদারি অপরাধে তাকে আসামি করা হতে পারে।

সিআইডি তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এরই মধ্যে তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিন পুরুষের আলামত পাওয়া গেছে। সিআইডিই এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এরপর থেকে সিআইডি নিশ্চিত হয়, তনুকে অনৈতিককাজ করা হয়েছিল; কিন্তু প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সঠিক ছিল না। কেন তাড়াহুড়া করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল সে বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা।

তনুকে কোথায়, কীভাবে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে প্রথম থেকে নানা গুঞ্জন ছিল। তদন্তের এ পর্যায়ে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে যে, তনুকে সেনানিবাসের ভেতরেই অনৈতিককাজ ও হত্যা করা হয়েছে।

বাইরে কোথাও হত্যার পর লাশ সেনানিবাসের ভেতরে ফেলে যাওয়ার কোনো সন্দেহাতীত আলামত তারা এখনো পাননি।

গত বুধবার বিকেলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমি সব সময় বলেছি, আমাদের অভিজ্ঞ সিআইডি রয়েছে। তারা সঠিকভাবে তদন্ত করতে পারবে। আপনারা দেখছেন একের পর এক জট খুলছে। আমি আশা করছি, সঠিকভাবে তদন্ত শেষ করবে সিআইডি। সেই সক্ষমতা তাদের আছে।

তনু হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হিমায়েত হোসেন এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে তনু হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তে কোনো আলামত লুকানো হলে তা অপরাধ। তদন্তে সব বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে আবারো ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সূত্র জানায়, তনু হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত- সন্দেহভাজন এমন ব্যক্তিদের তালিকা এরই মধ্যে তৈরি করেছে সিআইডি। সব আলামত ও তথ্য-প্রমাণ বিচার-বিশ্লেষণ করে ‘চূড়ান্ত সন্দেহ’ করার পর সিআইডি শিগগিরই ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে। ডিএনএ প্রোফাইল মেলাতে আদালতের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়ে বিভিন্ন অফিস ও দপ্তরে পাঠানো হবে।

তিনজনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়ার পর তদন্তকারী সংস্থা এখনো চূড়ান্তভাবে মনে করছে না এ হত্যাকাণ্ডে তিনজনই অংশ নিয়েছিল। তারা বলছে, তনুর জামা-কাপড়ে তিনজনের শুক্রাণু পাওয়া গেলেও এ হত্যাকাণ্ডে তিন বা তার অধিক সংখ্যক লোক অংশ নিতে পারে।

তনু হত্যার ঘটনায় কোনো নারীর সংশ্লিষ্টতা ছিল কি-না তাও খতিয়ে দেখখে সিআইডি। এরই মধ্যে তনুর পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নাম বলা হয়েছে তাদের ব্যাপারে তথ্য-প্রযুক্তিগত তদন্তও চলছে। তনুর পরিবারের সদস্যরা প্রথম থেকে বলে আসছে, তনুকে সেনানিবাসের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে এবং কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলেছে।

জানা গেছে, তনু হত্যার প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সমালোচনার পর আলামত নির্ণয়কারী সংগঠন মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে কুমিল্লা যান চিকিৎসকরা। সেখানে তারা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলে আসলে বিষয়টি কী হয়েছিল তা জানার চেষ্টা করেছেন।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মেডিকোলিগ্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে বলেছেন, বারবার পরীক্ষা করেও তনুর মাথায় কোনো আঘাতের চিহ্ন তারা পাননি। তাকে অনৈতিককাজের আলামতও পাওয়া যায়নি। হত্যার কারণ নির্ণয় করতে ব্যর্থ হওয়ার পরও কেন দ্রুত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি চিকিৎসক।

এদিকে তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে এরই মধ্যে একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. কে পি সাহা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেয়া হয়নি। এ নিয়েও কিছুটা গড়িমসি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ডিএনএ ও সোয়াব টেস্টের প্রতিবেদন চেয়ে সিআইডির কাছে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছেন ডা. কে পি সাহা। চিকিৎসকরা চাচ্ছেন দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগে ডিএনএ নমুনার রিপোর্ট বিচার-বিশ্লেষণ করতে। সিআইডি আদালতে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করলেও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্যানেলকে এখনো দেয়নি।

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. কে পি সাহা বলেন, সিআইডির কাছে ডিএনএ নমুনার পরীক্ষার অনুলিপি চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তা পাওয়া গেলেই দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেয়া যাবে।

এদিকে প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মী এ বিষয়ে কথা বলতে একটু দূরেই থাকছেন।

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, সিআইডি একটু দেরিতে হলেও একটি সত্য সামনে এনেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। তদন্তের মাধ্যমে বিচার পাব এটা বিশ্বাস করি।

সোহাগী জাহান তনুর লাশ গত ২০ মার্চ রোববার ময়নামতি সেনানিবাসের ভেতর একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন পরদিন এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন।



মন্তব্য চালু নেই