ঢাবির ৬০ টাকা যায় কোথায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চার কেন্দ্র। আর এই মুক্ত চর্চার কেন্দ্রে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না।

বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে তা সম্ভবপর হয়নি। ‘অসত্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ’ এই স্লোগান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এক বছর পরই ১৯২২ সালে ডাকসু প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদসহ জাতির ক্রান্তিলগ্নে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১৯৯৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা আরিফ হোসেন তাজের খুনের ঘটনায় ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচিত আমান-খোকন কমিটি ভেঙে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারপরের ৪ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে নির্বাচনের তারিখ ও সময় পেছাতে পেছাতে তা আর বাস্তবে রূপ নেয়নি।

নিয়মানুযায়ী প্রতিবছরই ডাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন হয়েছে ৩৬ বার। এর মধ্যে স্বাধীনতার পর হয়েছে মাত্র ৬ বার। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে।

প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ডাকসুর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। শুধু তাই নয় ছাত্রছাত্রীরা ডাকসুর জন্য বার্ষিক ৬০ টাকা চাঁদা দেয়।

এই টাকা যায় কোথায় ছাত্রছাত্রীরা তা জানে না।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, কর্মচারী সমিতির নির্বাচন, ডিন নির্বাচন, সিন্ডিকেট সভা ইত্যাদি নিয়মিত হলেও হয়নি ডাকসু নির্বাচন ।

১৯৮৯-১৯৯০ সালের স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর আজ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। ইতিহাসের পাতা সাক্ষী দেয় যে, ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যতগুলো অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাতে সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ছিনিয়ে এনেছে গণতান্ত্রিক অধিকার।

আর এখানেই যদি গণতন্ত্রের নিয়মকে অবমাননা করা হয় তাহলে দেশের গণতন্ত্রের কি ভয়াবহ দুরাবস্থা তা সবারই বোধগম্য। শুধু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই নয় ডাকসু সচল করার দাবি আজ সারাদেশের মানুষের দাবি।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমি তো চাই যত দ্রুত সম্ভব ডাকসু সচল করা হোক। যদি ডাকসু সচল করা যায় তাহলে তো আমাদের সবার জন্যই ভালো।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাই তো একদিন দেশের নেতৃত্ব দেবে। আজ যদি ডাকসু সচল করা হয় তাহলে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হবে। কিন্তু দিন দিন ডাকসু বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নুর বাহাদুর বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কোনো অভিভাবক নেই। ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনের কথা শোনার কেউ নেই। সিন্ডিকেট সভায় কি হয় তা কেউ জানে না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে সেখানে কেউ থাকে না। থাকবে কিভাবে?

আজ ২৩ বছর ধরে ডাকসুকে অচল করে রাখা হয়েছে। আজ ডাকসু থাকলে পড়ালেখার খরচ এতো বৃদ্ধি পেত না। এটা সবার জানা কথা যে, ডাকসুর নির্বাচন সবাই চায়।

তিনি বলেন, দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আজ কেউ এই ব্যাপারে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। আমরা শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চের পক্ষ হতে ডাকসু নির্বাচনের জন্য যেকোনো ধরনের আন্দোলনে যেতে প্রস্তুত।

বাণিজ্য অনুষদের ম্যানেজমেন্ট ১৪তম ব্যাচের ছাত্র নাজমুল ডাকসুর নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, আমাদের শিক্ষাজীবন প্রায় শেষ। আর কয়েকদিন পরই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাব কিন্তু ডাকসু যে কি জিনিস তা আর আমাদের বোঝা হলো না। ডাকসুর নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য আমাদের হলো না। ডাকসু আমাদের কাছে শুধুই ইতিহাস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাছুদুর রহমান বলেন, ডাকসু থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধানে কথা বলতো। এখন ছাত্রদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।

শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সবাই আজ ডাকসু নির্বাচন চায়। ডাকসু নির্বাচন আদৌ হবে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।



মন্তব্য চালু নেই