ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় নিয়মের পরিবর্তন

আর মাত্র কয়েকটা দিন। এর পরই শুরু হয়ে যাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তিযুদ্ধ। দেশে শিক্ষার্থীর অনুপাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন কম হওয়ায় প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষায় হয় তীব্র প্রতিযোগিতা। যা শিক্ষার্থীদের কাছে ভর্তিযুদ্ধ হিসেবেই বিবেচিত।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তি শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে।

এ বছর প্রথমেই অনুষ্ঠিত হবে ব্যবসায় অনুষদের অধীনের ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষার লক্ষ্যে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া চলমান আছে যা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত।

কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাবি প্রশাসন কয়েকটি নতুন নিয়ম চালু করেছে। শিক্ষার্থীর জন্য নিয়মগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হল-

পরীক্ষায় ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ: গত বছর ভর্তি পরীক্ষা চলকালীন বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থীকে আটক করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যারা ক্যালটুলেটরে করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নকল করছিল। তাই এবছর ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে পরীক্ষার হলে ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘ক্যালকুলেটের সমাধান করতে হয় এমন জটিল প্রশ্ন পরীক্ষায় থাকছে না এ ক্ষেত্রে ক্যালকুলেটর নিষিদ্ধ হলেও তা ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

অ্যাডভান্স ইংলিশ: এ বছরই প্রথম বারের মত ‘ঘ’ ইউনিটের মাধ্যমে যেসব শিক্ষার্থী ইংলিশ বিভাগে পড়তে চান তাদের বাংলাদেশ বিষয়াবলীর পরিবর্তে অ্যাডভান্স ইংলিশের উত্তরপত্র দাগাতে বলা হয়েছে। বিগত কোনো পরীক্ষায়ই শিক্ষার্থীদের অ্যাডভান্স ইংলিশের উত্তর করতে হয়নি। এ বছর অ্যাডভান্স ইংলিশ উত্তর করা ছাড়া ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ইংলিশ নেয়া যাবে না বলে জানানো হয়েছে। তবে অ্যাডভান্স ইংলিশ দাগালে অন্যান্য বিষয়ও নেয়া যাবে।

নাম্বার হ্রাস: ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শুধু মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থাকলেই সব ধরনের বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ পেতে হলেও শিক্ষার্থীদের পূরণ করতে কয়েকটি শর্ত এর মধ্যে অন্যতম হলো নাম্বারের শর্ত। গত বছর ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক শিক্ষার্থী মেধাতালিকায় প্রথম দিকে থেকেও কোনো বিভাগে ভর্তির সুযোগ পায়নি।
অন্যদিকে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়াও আইন বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষার্থীর আসল খালি ছিল। তাই এবারের ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ইংলিশ ও বাংলায় মার্কস প্রায় ২/১ করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে আইন কিংবা অন্যান্য বিষয় পেতে সুবিধা হবে।

আসন বৃদ্ধি: ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণিতে ৬ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৪৩৩ জন। এবছর ১৪৯টি আসন বেড়েছে বলে উপাচার্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ‘খ’ ইউনিটের আসন কমানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ফার্মেসি, আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ও ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটে আসন সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৯৩টি। তবে এ বছর এ ইউনিটটিতে ৪৭টি আসন বেড়ে আসন সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪০টিতে।

বিজনেস স্টাডিজ (ব্যবসায় শিক্ষা) অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট থেকে গত বছর ১ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। এ বছর সেই সংখা ৯৫ জন বেড়ে দাড়িয়েছে ১ হাজার ১৭০টিতে।

গত বছর সম্মিলিত ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ভর্তি সুযোগ পেয়েছিল ১ হাজার ৩৩৬ জন। এ বছর ইউনিটটিতে ৮০টি নতুন আসন বেড়ে মোট ১ হাজার ৪১৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।

চারুকলা অনুষদ (সব শাখা) ‘চ’ ইউনিটে গত বছর ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল ১১৯ জন। এবছর ১৬টি আসন বেড়ে মোট ১৩৫ জন শিক্ষার্থী অনুষদটির বিএফ কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাবে।

তবে প্রতিটি ইউনিটে আসন বাড়লেও কমেছে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের আসন। ইউনিটটিতে গত বছর আসন সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩১০। এ বছর ইউনিটটিতে ৮৯টি আসন হ্রাস পেয়ে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২১টিতে।

বিস্তারিত বিষয় জানতে বিষয়ে বিশ্বিবিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিস সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে নতুন করে কিছু নিয়ম করা হয়েছে।’

তবে মূলত ভর্তি পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য এ বছর এসব নিয়ম করেছি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে সর্বোচ্চ ১৪৯টি আসন বাড়ানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।



মন্তব্য চালু নেই