ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আরও তিন সেতু

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিদ্যমান তিনটি বড় সেতুর পাশে নির্মিত হচ্ছে আরও তিনটি নতুন সেতু। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে- দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেতু তিনটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এরপর ওই বছরের পুরো সময়জুড়ে চলবে পুরনো তিন সেতুর সংস্কারের কাজ।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

সেতু মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন সেতুর নির্মাণ ও পুরনোগুলোর সংস্কার শেষ হলে বন্দর নগরীর সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের গৃহীত নতুন তিন সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুল হক বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান সেতু তিনটি দুই লেনের। কিন্তু সড়ক হল চার লেনের। এ কারণে সেতুগুলোকে কেন্দ্র করে যানজট লেগেই থাকে। এ কারণে ওই সেতুগুলোর পাশে নতুন করে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন এই তিনটি সেতু নির্মাণ হলে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে আর যানজট থাকবে না।’ তিনি বলেন, বর্তমানে সেতু তিনটিরই নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করি, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ কাজ শেষ হবে।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নতুন তিনটি সেতু নির্মাণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন প্রকল্প’।

এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৮৬.৯৩৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার প্রকল্প সাহায্য রয়েছে ৬ হাজার ৪২৯.২৮৯৬ কোটি টাকা এবং সরকারি তহবিল থেকে যোগান আসবে ২ হাজার ৫৭.৬৪৮৭ কোটি টাকা। জাইকার অর্থ সেতুগুলোর নির্মাণ, পুনর্বাসন ও পরামর্শ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় হবে। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ প্রশাসনিক ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহ হবে সরকারি তহবিল থেকে।

২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন পায়। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল। ওএসজেআই জয়েন্টভেঞ্চার নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের চুক্তি হয় ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর।

প্রকল্পের অধীনে শীতলক্ষা নদীর ওপর বিদ্যমান সেতুর পাশে ভাটিতে নির্মিত হচ্ছে চার লেনের দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩৯৭.৩ মিটার। সেতু সংশ্লিষ্ট ৭০৩.৫ মিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক হবে আট লেনের। প্রকল্প সমাপ্তির পর কাঁচপুরের প্রথম ও দ্বিতীয় সেতুতে লেন হবে আটটি। রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবং ঢাকা ও সিলেটের নির্বিঘ্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করতে সেতুর কাঁচপুর প্রান্তে ফ্লাইওভার ও ইন্টারসেকশন নির্মাণ করা হবে।

মেঘনা নদীর ওপর বিদ্যমান সেতুর পাশে উজানে চার লেনের হচ্ছে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু। এর দৈর্ঘ্য হবে ৯৩০ মিটার এবং ছয় লেনের সংযোগ সড়ক হবে ৮৭০ মিটার। প্রকল্প শেষে মেঘনার দু’টি সেতুতে লেন হবে ছয়টি।

দ্বিতীয় গোমতী সেতুও হচ্ছে বিদ্যমান গোমতী সেতুর পাশে ভাটিতে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১৪১০ মিটার। সেতুকে কেন্দ্র করে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক হবে ১ হাজার ১০ মিটার দীর্ঘ। প্রকল্প সমাপ্তির পর গোমতীর দুই সেতুর লেন হবে ছয়টি।

জানা গেছে, বেশ জোরেসোরেই চলছে সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যে প্রকল্পের সাইট অফিস, ল্যাবরেটরি, স্ট্যাক ইয়ার্ড, ওয়ার্কশপ, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের বাসস্থান নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচপুর সেতুর সংযোগ সড়ক সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ভরাট করা হয়েছে। কয়েকটি পিয়ারের (পিলার) টেস্ট পাইল সম্পন্ন হয়েছে। মেঘনা দ্বিতীয় সেতুর জন্য ঢাকা প্রান্তের সংযোগ সড়ক সংলগ্ন রিটেইনিং ওয়ালের কংক্রিট পাইল সম্পন্ন হয়েছে। এখন জোর প্রস্তুতি চলছে মূল সেতুর পাইলিং কাজের। দ্বিতীয় গোমতী সেতুর একাধিক পিয়ারের টেস্ট পাইলিং সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা প্রান্তে চলছে সংযোগ সড়কের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ।



মন্তব্য চালু নেই