ঢাকায় হচ্ছে ১০০ তলার মিডিয়াপল্লী
রাজধানীর কাওরান বাজারে নির্মাণ করা হবে করপোরেট ও মিডিয়াপল্লী। এজন্য একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নগরীর সার্বিক উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে ৮ থেকে ১০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনগুলো হবে স্টিলের কাঠামোর ওপর অত্যাধুনিক কাচ মোড়ানো।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীতে বড়ধরনের কোনো করপোরেট ও মিডিয়াপল্লী নেই। তাই কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার এলাকার ২৩ দশমিক ৫৮ বিঘা জমির উপর ৮ থেকে ১০টি বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া হাউজকে কার্যালয় বানানোর জন্য ফ্লোর বরাদ্দ দেয়া হবে। এরই মধ্যে ওই এলাকার কাঁচামালের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, পরিকল্পনাধীন প্রতিটি ভবনে অত্যাধুনিক কারপার্কিং ব্যবস্থা থাকবে। ১০০ তলার ফাউন্ডেশনে প্রথম অবস্থায় ৩০তলা নির্মাণ করা হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সরিয়ে নেয়া হলে ভবনগুলোকে ১০০ তলায় উন্নীত করা হবে। ভবনগুলোর নাম দেয়া হবে ‘বঙ্গবন্ধু হাব’ অথবা ‘কাওরান হাব’। এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে ডিএনসিসি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করতে এরই মধ্যে মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে আলাদা তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে মহাখালী কাঁচাবাজার নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেখানে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে দোকান বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। এ লক্ষ্যে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে আড়ৎ মালিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারেও এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পরিকল্পনাটির কথা জানিয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। আমরাও এগিয়ে যেতে চাই। দেশের সব করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া হাউজকে একত্রিত করে আমরা একটি হাব করতে চাই। এজন্য কাঁচাবাজারের কাঁচাবাজার এলাকা পছন্দ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আধুনিক সব ব্যবস্থা রেখে সেখানে প্রথম অবস্থায় ৮ থেকে ১০টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনগুলো হবে স্টিলের বডির উপর গ্লাসের দালান। এগুলো দেশি-বিদেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া অফিসগুলোকে বরাদ্দ দেয়া হবে। যেখান থেকে তারা তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবে।’
বিএম এনামুল হক আরো বলেন, ‘ঢাকার কাওরান বাজার আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এর পাশে তেজগাঁও শিল্প এলাকা। এটিকে প্রধানমন্ত্রী ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হিসেবে গঠন করেছেন। আমরাও চাই কাওরান বাজারকে তেজগাঁওর সঙ্গে যুক্ত করে একটি শিল্পজোড় গড়ে তুলতে। কিন্তু রাজধানীর জন্য এ বাজারটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ সে মোতাবেক গড়ে ওঠেনি। স্থানটিতে কাঁচাবাজর এটা মানায় না। এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ স্থানটিকেই আমরা পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। এজন্য কাওরানবাজারের বর্তমান ব্যবসায়ীদের স্থানান্তরেরও উদ্যোগ নিয়েছি।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কাওরান বাজারের কাঁচাবাজারে কাঁচামাল পরিবহনের কাজে প্রতিদিন মালবাহী শত শত ট্রাক ও ছোট-বড় যানবাহন আসে। এ জন্য রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিতে যানজট লেগেই থাকে। এজন্য কাঁচাবাজারকে স্থানান্তরের পাশাপাশি ওই এলাকাকে শিল্প জোন হিসেবে গঠন করতে উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি।
জানা যায়, কাওরান বাজার কাঁচাবাজারের সর্বমোট ১ হাজার ৭৮৯ জন ব্যবসায়ীকে মহাখালী, যাত্রাবাড়ী ও আমিনবাজারে নতুন তিনটি কাঁচাবাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান বরাদ্দ দেয়া হবে। শুধু মহাখালীতে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে ৩৬০টি দোকান।
এদিকে কাওরান বাজার ছেড়ে যেতে রাজি নন অধিকাংশ ব্যবসায়ী। বাজারটির কাঁচাবাজারের দোকান বরাদ্দের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলে বাজারের ১ হাজার ১৬৩টি দোকানের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ২২টি। এতে কাওরান বাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় দোকান বরাদ্দের জন্য দ্বিতীয় দফায় আবেদনের মেয়াদ বাড়িয়েছে ডিএনসিসি। এতেও সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে কৃষিপণ্যের বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি কাওরান বাজারের যানজট কমাতে ২০০৬ সালের ৪ অক্টোবর একনেকের সভায় ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা শহরের তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ পাস হয়। ২০১০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তিন দফা সময় বাড়িয়ে তা ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আর প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকায়।
ডিএনসিসির এ প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরীর চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য চালু নেই