ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ৫টি ভুল ধারণা

ডেঙ্গুজ্বর আবার পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। তবে ভ্রান্ত ধারণার কারণে ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে অনেকের অযথা ভীতি রয়েছে। অযথা ভীতি কখনোই কোনো সমাধান দিতে পারে না। বরং তাতে সমস্যা আরো জটিল হয়,চলে যায় নাগালের বাইরে।

ডেঙ্গু সম্পর্কে ভুল ধারণা অনেক। কারো কারো ধারণা ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ। কেউ কেউ মনে করেন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলেই বুঝি তা স্পর্শকারীর মাঝে ছড়িয়ে যাবে। আবার কারো ধারণা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক করে রাখা উচিত। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে,একই বিছানায় ঘুমালে, একই তোয়ালে কিংবা একই কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে, একই গ্লাস বা প্লেট ব্যবহার করলে অন্যদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।সুতরাং ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক করে রাখার প্রয়োজন নেই।

মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি কখনোই সরাসরি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে পারে না। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির, উপসর্গ দেখা দেয়া থেকে শুরু করে ৬ দিন পর্যন্ত মশার জন্য সংক্রামক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এই সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো স্বাভাবিক এডিস মশা কামড় দিলে সেই মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহক হয়ে পড়বে। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলে তখন আর এটি হবে না। তাই এ সময়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীকে মশারীর নিচে রাখা যেতে পারে।

আবার অনেকের ধারণা একবার ডেঙ্গুজ্বর হলে বাকী জীবনে আর কখনো ডেঙ্গুজ্বর হবে না। সাধারণের এই ধারণাটিও পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে। এই ৪টির মধ্যে যে কোনো ১টির সংক্রমণ থেকেই ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। কাজেই ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনো একটি সেরোটাইপে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভবিষ্যতে ভাইরাসের সেই সেরোটাইপটি দ্বারা আর আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়। কারণ শুধুমাত্র সেই সেরোটাইপটিতে রোগীর আজীবন প্রতিরোধ ক্ষমতা (লাইফ লং ইমিউনিটি) গড়ে ওঠে। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাসের বাকী ৩টি সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ঠিকই রয়ে যায়।

তবে কেউ যদি পৃথক পৃথকভাবে ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ দ্বারা জীবনে ৪বার ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে বাকী জীবনে আর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা নয়।

অনেকে মনে করেন ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। প্রকৃত পক্ষে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বাতাসে ছড়ায় না। শুধুমাত্র ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রান্ত এডিস মশার কামড়েই কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হতে পারে।এডিস মশাই ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহন করে। কাজেই বাতাসে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু উড়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই।

কেউ কেউ মনে করেন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে সেই শিশুটিরও হয়তো ডেঙ্গুজ্বর হবে। এ ধারণা ঠিক নয়। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। মায়ের দুধের সঙ্গে ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু ভাইরাস শিশুর শরীরে যেতে পারে না। তবে শিশুটিকে যদি ডেঙ্গুভাইরাসে আক্রান্ত মশা কামড় দেয় তাহলে শিশুটিরও ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে।

লেখক : ডা. সজল আশফাক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক



মন্তব্য চালু নেই