ডি ভিলিয়ার্সেই ধ্বংস ‍ওয়েস্ট ইন্ডিজ

সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নতুন নতুন অনেক কাব্যগাথা লিখলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স।

মহাযজ্ঞের বড় পোডিয়ামে ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম ১৫০, বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি, বিশ্বের ১৫তম অধিনায়ক হিসেবে ওডিআই ক্রিকেটে তিন হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার নজির দেখান ভিলিয়ার্স। আর এতো সব রেকর্ড গড়ার দিনে রানের বন্যায় চাপা পড়তে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেয়া ৪০৯ রানের হিমালয় তাড়া করতে নেমে অলআউট হয়েছে মাত্র ১৫১ রানেই। ৩৩.১ ওভারেই। হারটা বিশাল ২৫৭ রানের।

অথচ আগের ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৭২ রান করেছিল তারা। গেইল একাই করেছিলেন ২১৫ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। শুধু তাই নয়, সব মিলিয়ে এই ম্যাচের আগের তিনটি ম্যাচেই তিনশ’র অধিক রান করেছিল ক্যারিবীয়রা। কিন্তু এই ম্যাচে এসে অলআউট হলো ১৫১ রানে।

এক মাস আগেই জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ভিলিয়ার্সের রুদ্র রোষের শিকার হতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেদিন মাত্র ৩১ বল মোকাবেলা করে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরি হাঁকানোর বিস্ময় উপহার দেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। ৩৮ দিন বাদে সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আবারো খুনে মানসিকতায় ভিলিয়ার্স।

এদিন ক্রিকেটের যাবতীয় ব্যাকরণ-বহির্ভূত শট ও পিচ হিটিংয়ের প্রদর্শনী সাজিয়ে মাত্র ৬৬ বলে ১৬২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেললেন এবিডি। তাতেই ধ্বংস উড়তে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারানো দলটি এদিন টস হেরে শুরুটা ভালোই করেছিল। ইনিংসের শুরুতে রান রেটের লাগাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখেছিল।

ফলে ইনিংসের প্রথম ৩০ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে মাত্র ১৪৭ রান জমা হয়েছিল। কিন্তু শেষে সব সমীকরণ বদলে দেন ভিলিয়ার্স। প্রোটিয়া অধিনায়ক ছাড়া এই ম্যাচে জেপি ডুমিনির বদল সুযোগ পাওয়া রিলে রোসিউয়ের ব্যাটেও ছোট্ট একটা ঝড় দেখা গেছে। ৩৯ বলে ৬১ রান করেন তিনি। ৬৫ রান এসেছে হাশিম আমলার ব্যাট থেকে। ৬২ রান করেছেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে আন্দ্রে রাসেল ৯ ওভার বল করে ৭৪ রানের বিনিময়ে দুটি উইকেট শিকার করেন।

শুক্রবার ‘বি’ গ্রুপের হাইপ ছড়ানো এই ম্যাচের আগে বারবার ভেসে আসছিল গেইলের নাম। ম্যাচের ‘এক্স’ ফ্যাক্টরও ভাবা হচ্ছিলো জ্যামাইকান দানবকে। কেননা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই নিজের ব্যাটটাকে খোলা তলোয়ার বানিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন উইন্ডিজ ওপেনার। কিন্তু দলের একান্ত প্রয়োজনের সময় পুরোপুরি ব্যর্থ ৩৫ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেয়া ৪০৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গেইলের অবদান ৪ বলে ৩ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে কাইল অ্যাবটের বলে বোল্ড হন তিনি। থিতু হতে পারেননি জিম্বাবুয়ে ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান মারলন স্যামুয়েলসও। রানের খাতা খোলার আগেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ডানহাতি ব্যাটার।

১৬ রানে দুই উইকেট খোয়ানোর পর ক্যারিবিয়ানদের বিপদ আরো বেড়ে যায় ৬৩ রানের মধ্যেই জোনাথন কার্টার (১০), লেন্ডন সিমন্স (০), ডোয়াইন স্মিথ (৩১), ড্যারেন সামি (৫) ও আন্দ্রে রাসেলের (০) উইকেট হারিয়ে। বিপদ সামলানোর চেষ্টা করেন দলীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। কিন্তু তার ইনিংস সেরা ৫৬ রান দলের বড় পরাজয়ের পথে অপেক্ষা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই যোগ করতে পারেনি। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে হোল্ডার ফিরে যাওয়ার সাথে সাথেই পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় ক্যারিবীয়দের।

দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনার ইমরান তাহির ক্যারিয়ার সেরা পারফর্ম করে ৪৫ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট দখল করেন। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন কাইল অ্যাবট এবং মরনে মর্কেল। বাকি উইকেটটি গেল ডেল স্টেইনের পকেটে।



মন্তব্য চালু নেই