“ডাক্তারের কথা বলে হাতুড়ে এক মহিলার কাছে নিয়ে যায় গর্ভপাতের জন্য…”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমি অনেক দিন ধরে একটা সমস্যায় ভুগছি। আমি একজনকে ভালোবাসতাম। আমরা তিন বছর প্রেম করার পর বিয়ে করি । আমরা দুইজন ইয়ারমেট। বিয়ের পর প্রথমে কেউ মেনে নিতে চায় নি। পরে সবাই মেনে নিয়েছে। ছেলে অনেক নেশা করে। মদ,তাড়ী এমন কি ইয়াবাও খায়। আমি বিয়ের পর এইসব জানতে পারি। এছাড়া অনেক মেয়ের সাথে সে সম্পর্ক করে।

আমার বয়স ২৩ বছর, ওর ২৮ বছর। আমি যখন আমার শাশুড়িকে ওর ব্যাপারে ঐ সব কথা বলতাম, তখন আমার শাশুড়ি ছেলেকে কিছু না বলে উল্টা আমাকে বকাবকি করত। সে বেকার, কিছুই করেনা । বিয়ে হওয়ার দেড় বছরের মাথায় আমি প্রেগন্টেট হই। তখন আমি আমার মায়ের বাসায় ছিলাম। আমার শ্বশুরবাড়ি তখন থেকে আমাকে বাচ্চা নষ্ট করতে বলে, আমি বলি করবো না। আমাকে আমার শাশুড়ির অসুখের কথা বলে বার বার ডেকে পাঠায়। আমি কোন উপায় না দেখে শ্বশুর বাড়ি চলে যাই। তখন থেকে শুরু হয় আমার প্রতি মানসিক নির্যাতন ৷ মা আর ছেলে মিলে অনেক গালাগালি করে। বলে বাচ্চা নষ্ট না করলে আমাকে ডির্ভোস দিবে। আর এই বাচ্চার দায় দায়িত্ব ওরা নিবেনা। আমাকে কাগজে সই করে দিতে হবে যে ঐ বাচ্চার দায় ওদের থাকবেনা।

আমি অনেক কান্না করি। রাতে আবার শুরু হয় আমার স্বামীর নির্যাতন। শারীরিক অনেক অত্যাচার করে। গলা চিপে ধরে। পেটে চাপ দেয়। তখন থেকে শুরু হয় আমার পেট ব্যথা হয়। শেষে সকালে আমার ব্লিডিং হয়, আবার বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে নিয়ে যায় হাতুড়ে এক মহিলার কাছে গর্ভপাত করার জন্য, আমি কিছুই বলতে পারিনি। দুই মাস আমার নন স্টপ ব্লিডিং হয়।

আমার অবস্থা খুব খারাপ হতে লাগলো। অবশেষে আমার মায়ের চলে আসি। আমি সুস্থ হতে পারিনি, তাতেই ছেলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পুরো দেড় মাস আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। শেষে আমার শাশুড়ি একদিন রিং দিয়ে বলে ছেলে নাকি ডির্ভোস পাঠাবে। অবশেষে আমি মামলা করি। দীর্ঘ সাত মাস পর ছেলে ফিরে আসতে চায়। ছেলে তখন ওয়ারেন্ট আসামী। সে আমাকে বলে তাকে একটা শেষ সুযোগ দিতে।

আমি একটা জব করি। সেই সুবাদে তাঁকে আমার কাছে ডেকে নিই। ভালই চলছিল, এর মধ্যে মামলার ডেট ছিলো। শুধু ওর ব্যবহার দেখে আমি ডেট মিস করি। দুই মাস থাকার পর সে আবার বাড়িতে। বাড়িতে যাবার পর আগের মত ব্যবহার করে। আমি চাকরি করি আর ও সারাদিন রুমে থাকতো। আমি কী করবো, তাকে ভুলে যেতে পারছিনা। ও বলে দিয়েছে আমাকে নিয়ে থাকবেনা। কিন্তু আমি সেটা মেনে নিতে পারছিনা। আমি তাকে বলি যে আমার কি দোষ বল। সে বলে তোমার কোন দোষ নেই।

আমাদের এখনো ডির্ভোস হয় নি। কী করবো আপু?”

পরামর্শ:
আপনার চিঠি পড়ে নারী হিসাবে আমি লজ্জিত বোধ করছি আপু। এই কারণে লজ্জিত বোধ করছি যে এতকিছুর পরও এই ছেলেকে আপনি ভুলতে পারছেন না। ছেলে মাদকাসক্ত, পরনারীতে আসক্ত, আপনাকে নির্যাতন করেছে এবং করে, সর্বোপরি ছেলে আপনাকে নিয়ে থাকতে চায় না… এত কিছুর পরও আপনি সেই ছেলেকে চান। এটা রীতিমত আত্মসম্মানহীন মানুষের মত আচরণ। একজন শিক্ষিতা চাকরিজীবী নারী এমন আচরণ করলে বাকিরা কী করবে?

এগুলোও বাদ দিন, ধরে নিলাম স্বামীর সব অপরাধ আপনি ক্ষমা করতে পেরেছেন। কিন্তু আপনি না মা আপু? আপনার স্বামী ও শাশুড়ি মিলে আপনার অনাগত সন্তানকে হত্যা করেছে আর আপনি তাদেরকে মাফ করে দিচ্ছেন, একজন মা হয়ে কীভাবে পারছেন বলুন তো?

যাই হোক, আপনাকে দেবার মত কোন পরামর্শই আসলে আমার কাছে নেই। আপনি যদি নিজে এটা বুঝতে না পারেন যে ছেলে দুই মাস আপনার কাছে ছিল যেন মামলার তারিখ মিস করেন আপনি, তাহলে আর কেউ আপনাকে কিছু বোঝাতে পারবে না। সর্বোপরি, জোর করে তো মানুষের মন পাওয়া যায় না। স্বামী যদি এটাই বলেই থাকেন যে আপনার সাথে সংসার করবেন না, তাহলে এখানে জোরাজুরি করার কিছুই নেই। স্বামী আপনাকে ডিভোর্স দিতে চান, নিশ্চয়ই এর পেছনে কারণ আছে। হয়তো আপনাকে তার আর ভালো লাগে না বা তিনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চান। শ্বশুরবাড়িতেও যে আপনাকে কেউ পছন্দ করে না, সেটাও শাশুড়ির আচরণ থেকে স্পষ্ট। এমন অবস্থায় আপনি জোর জবরদস্তি করে কতক্ষণ স্বামীর সংসারে থাকতে পারবেন বা স্বামীর মন পেতে পারবেন। সেটা আমি আসলেই জানি না।

তবে হ্যাঁ, আপনার স্থানে আপনি হলে কখনোই আমার সন্তানের হত্যাকারীকে ভালবাসতে পারতাম না। একজন মা তাঁর সন্তানের হত্যাকারীকে ভালবাসতে পারে না।প্রিয়.কম



মন্তব্য চালু নেই