ঠাকুরগাঁওয়ে লিচুর বাগানে মৌ চাষ : খাঁটি মধু সংগ্রহে মানুষের ভিড়

শরিফুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও জেলার সুস্বাদু ও মিষ্টি লিচুর পরিচিতি দেশ জুড়ে। তাই এবার লিচু বাগানে মৌ মাছির বাক্স বসিয়ে মধু আহরন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন মৌ চাষি। এর ফলে একদিকে যেমন মৌ চাষিরা মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে মৌ মাছির মাধ্যমে মুকুলে মুকুলে পরাগায়ন ঘটায় লিচু গাছ মালিকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। এক কথায় বাগানে মৌ চাষ করে চাষিরাও খুশি এবং মালিকরাও খুশি। ঠাকুরগাঁও জেলায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু লিচু বাগান। প্রতি বছর খরচ হয়না এবং অল্প পরিচর্যায় প্রতি বছর মোটা অঙ্কের অর্থ আয় হয় বলে অনেকে লিচুর বাগান করেছেন। চলতি বছর ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলায় ৮শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫ হাজার বাগানে লিচু চাষ হয়েছে। বর্তমানে লিচুর বাগানগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া সড়কের পাশে উত্তর ঠাকুরগাঁও এলাকায় অবস্থিত লিচু বাগানগুলোতেও বেশ মুকুল এসেছে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুমের লিচু বাগানটি বড় এবং ৩ শতাধিক লিচু গাছ থাকায় সুদুর জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে নুরুল আমিন ও নজরুল ইসলাম নামে ২ মৌ চাষি সে বাগানে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৌ চাষ করে মধু সংগ্রহ করছেন। মৌ চাষি নুরুল আমিন জানান, প্রশিখা এনজিও’র উদ্ভাবিত মৌচাষ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তারা। ওই বাগানে তারা শতাধিক ব্র“ড ও নিউক্লিয়াস নামের ছোট বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানী মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য এপিচ মেইলিফ্রা জাতের কর্মী মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা মৌ মৌ গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল হতে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির দল নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করছে। ১০/১৫ দিন অন্তর অন্তর প্রতিটি বাক্স হতে চাষিরা ৬/৭ মণ মধু সংগ্রহ করছেন। যে লিচু গাছে মৌমাছির আগমন বেশি হয় সে গাছের মুকুলে পরাগায়ন ভাল হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর যেমন বাম্পার ফলনের সম্ভবনা থাকে, তেমনি মৌ চাষিরা বেশি মধু সংগ্রহ করে বানিজ্যিকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। জেলার বিভিন্ন বাগান থেকে শতাধিক মৌ চাষী প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মণ মধু সংগ্রহ করে বাজারজাত করছে। কাঠের তৈরী শত শত বিশেষ বাক্সের মাধ্যমে মৌ চাষ মধু সংগ্রহ করা দৃশ্য দেখে এলাকাবাসীও উদগ্রীব হয়ে ছুটে আসছেন মধু কেনার জন্য লিচু বাগানে। ক্রেতা নারগিস আক্তার জানান, বাজারে খাঁটি মধু পাওয়া যায়না। তাই স্ব চোখে নির্ভেজাল মধু সংগ্রহ করতে পেরে তারা নিজেকে ধন্য মনে করছেন। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আরশেদ আলী জানান, চলতি বছর প্রতিটি লিচু বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। আর এ কারণে প্রচুর মৌ মাছির আগমন দেখা দিয়েছে। লিচু গাছ থেকে মৌ মাছি মধু আহরণের ফলে গাছে গাছে বেশি করে পরাগায়ন হয় এবং শতকরা ৩০-৪০ ভাগ লিচুর বেশি ফলন হয়। লিচু এবং মধু দু’টি প্রাকৃতিক সম্পদ-এ দু’টি সম্পদ সংগ্রহে সঠিক প্রশিক্ষণ ও বাজারজাত করণে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হলে চাষিরা যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ঠাকুরগাঁওবাসী।



মন্তব্য চালু নেই