ট্রেনের ছয় কর্মচারীর ওপর সেনাসদস্যদের হামলা

যাত্রার সময় কয়েকজন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে চিত্রা এক্সপ্রেসের ছয় কর্মচারীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ট্রেনে দায়িত্বরত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই), অ্যাটেনডেন্ট ও অ্যাটেনডেন্ট গার্ডসহ রেলওয়ের ছয় কর্মচারীকে মারধর, লাঞ্ছিত করা এবং রাজস্ব খাতের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রেনের যাত্রী ওই সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনায় গত বুধবার পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানায় সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশ অভিযুক্ত দুই সেনাসদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনীর জিম্মায় জামিন দিয়েছেন।

হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের জুনিয়র টিটিই মেহেদী হাসান খান, ইলিয়াস হোসেন, কন্ডাক্টর গার্ড আকরাম হোসেন, খুলনা ক্যারেজের অ্যাটেনডেন্ট মোশারফ হোসেন, সামছুল আলম ও বাদশা আলম।

আহত টিটিই মেহেদী হাসান বুধবার রাতে ঈশ্বরদী রেল থানায় মামলার জন্য লিখিত অভিযোগ জমা দিলে পুলিশ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হিসেবে সেটি লিপিবদ্ধ করে।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতে (২৮ জুন) ঢাকা থেকে খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন। ট্রেনটি জয়দেবপুর এসে পৌঁছালে ১৫ থেকে ২০ জন সেনাবাহিনীর সদস্য এসি চেয়ার কোচে ওঠার চেষ্টা করেন। ট্রেনে কর্তব্যরত রেল কর্মচারীরা টিকিট ছাড়া সেনাসদস্যদের ট্রেনের এসি কোচে উঠতে নিষেধ করে যাঁর যাঁর কাজে ফিরে যান। ট্রেনটি রাত ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশনে পৌঁছামাত্র ওই সেনাসদস্যরা তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করেন। এ সময় মেহেদী হাসান খান ও ইলিয়াস হোসেনের কাছ থেকে রেলের রাজস্বসহ ব্যক্তিগত মোট ৬ হাজার ৩০০ টাকা ছিনিয়ে নেন। ‘কমান্ডো’ কায়দায় মেহেদী হাসানের গায়ে পরা রেলের পোশাক ধরে টেনেহিঁচড়ে তাঁকে নিচে শুইয়ে লাথি মারতে থাকেন। কয়েকজন ট্রেনযাত্রী এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। পরে ট্রেনের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা হামলার অভিযোগে দুই সেনাসদস্যকে আটক করে ঈশ্বরদী রেল থানায় নিয়ে আসেন।

মেহেদী হাসান খান জানান, তিনি আহত অবস্থায় ওই রাতে পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল, শামসুল আলম সকালে খুলনা রেল হাসপাতালসহ অন্যরা ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই সেনাসদস্যদের বেপরোয়া আচরণের কারণে পাকশী বিভাগের রেল কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা সেনাবাহিনীর সুনাম বজায় রাখার জন্য দোষী সেনাসদস্যদের শাস্তি দাবি করেছেন।

ঈশ্বরদী রেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেনাসদস্যরা বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস ভুঞাপুর টাঙ্গাইলে কর্মরত বলে জানা গেছে। ঘটনাটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে তিনি ঈশ্বরদী রেল থানায় লিপিবদ্ধ করেছেন। মামলা করা হলে সেটি হবে কমলাপুর রেল থানায়। অভিযোগপত্রটি সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরে পাঠানোর জন্য তিনি রেলওয়ে পুলিশ সুপার সৈয়দপুরে পাঠিয়েছেন।

ওসি জানান, এ ঘটনায় দুই সেনাসদস্যকে ট্রেন থেকে আটক করে ঈশ্বরদী রেল থানায় আনা হলে বুধবার রাত দুইটার সময় ঈশ্বরদী মিলিটারি ফার্মের কর্পোরাল কাজী জামানের জিম্মায় অভিযুক্ত দুই সেনাসদস্যকে জামিন দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন আক্তার মাহমুদ ও মো. রায়হান।



মন্তব্য চালু নেই