টেন্ডার-প্রশাসনিক দ্বন্দ্বেই ইবিতে সংঘর্ষ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের নেপথ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাদের ইন্ধন ও টেন্ডার ভাগাভাগির প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী সমর্থক একাধিক সিনিয়র শিক্ষক এসব অভিযোগ করেন। এছাড়া সংঘর্ষের পেছনে টেন্ডার প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ঠিকাদার, বহিরাগতদের ভূমিকা রয়েছে বলেও জানা গেছে। ক্যাম্পাসের সব ধরনের অস্থিতিশীল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বহিরাগতদের সম্পৃক্ততা থাকলেও এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এমনকি সংঘর্ষে অংশ নেয়া অস্ত্রধারী ক্যাডাররা আটক হয়নি। উদ্ধার করা হয়নি কোনো আগ্নেয়াস্ত্র।

গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী ঠিকাদার, বহিরাগত, চাকরি প্রত্যাশীসহ প্রশাসনিক কর্তাদের ক্ষমতালিপ্সু মনোভাবকে দায়ী করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। টেন্ডার ও বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের কর্তারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপাচার্য ড. আবদুল হাকিম সরকার ও আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়ে ভিসিপন্থি গ্রুপ ও প্রো-ভিসি ড. শাহিনুর রহমান ও সাবেক প্রো-ভিসি ড. কামাল উদ্দিনকে নিয়ে প্রো-ভিসিপন্থি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ক্যাম্পাসের যে কোনো বিষয়ে শিক্ষকদের এই দুটি গ্রুপ কখনোই ঐক্যমতে পৌঁছতে পারছেন না। এমনকি এই গ্রুপ দুটি তাদের প্রভাব বজায় রাখতে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপটি ভিসিপন্থি ও সহ সভাপতি-চাকরি প্রার্থী গ্রুপটি প্রোভিসিপন্থি হিসেবে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বিরোধিতা ও মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

অভিযোগ আছে, ক্যাম্পাসে টেন্ডার কেন্দ্রিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের প্রভাব ও স্থানীয় ঠিকাদারদের অসন্তোষ সংঘর্ষের পেছনে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। এমনকি গত শনিবারের সংঘর্ষে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন, ঠিকাদার বিকাশসহ স্থানীয় ঠিকাদাররা প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। সেই সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগের চাকরি প্রত্যাশী ও বহিরাগতদের গ্রুপটি সামনে থেকে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করেনি পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের বাংলা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আসাদ, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের আশেকুর রহমান আতিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন। এছাড়া সহ-সভাপতি ও টেন্ডার প্রত্যাশীদের গ্রুপের পক্ষে সজিবুল ইসলাম সজিব ও বহিরাগত সন্ত্রাসী বশিরকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অস্ত্র প্রশিক্ষণের দায়ে সজিবকে সাময়িক বহিস্কার করে প্রশাসন। কিন্তু শনিবারের সংঘর্ষে অস্ত্রধারী সজিব আবারো পুরনো রুপে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চৌধুরী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্রধারীদের ব্যাপারে এখনো কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভিযোগ অথবা মামলার ভিত্তিতে অস্ত্রধারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ বলেন, ‘প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন তা সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীসহ সরকারি এজেন্সিগুলো অবগত আছে বলে আমি মনে করি। সরকারি এসব এজেন্সি ও গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামপন্থি এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ছাত্রলীগের মধ্যে যে গ্রুপিং আছে তা একতাবদ্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাদের একটা দায়িত্ব আছে। কিন্তু কর্তাব্যক্তিরা সেটি না করে উল্টো ছাত্রলীগকে নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করছে। যার ফলে ছাত্রলীগ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে।’

প্রোভিসি প্রফেসর ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পেছনে টেন্ডার কেন্দ্রিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। যে কারণে অনেক আগেই টেন্ডার এভালুয়েশন কমিটি থেকে আমি সরে এসেছি। ফলে এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’

ভিসি প্রোভিসির দ্বন্দ্বের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এধরনের দ্বন্দ্বের কথা অলিক কল্পনা মাত্র। আমরা একসঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘প্রশাসনের কর্তাদের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার পেছনে যারা কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্যাম্পাসে যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই