টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কৃষি ও কৃষকের বিকল্প নেই : রাষ্ট্রপতি

মো. শাহীন সরদার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: তোমাদের অনেক ঋণ জমেছে দেশ ও জাতির কাছে। এখন তোমাদেরই সেই ঋণ পরিশোধের পালা। গোটা দেশ আজ তোমাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে, বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘলালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রসেনানী হিসেবে আপন স্থান করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে মঙ্গলবার ৭ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

এছাড়া বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নের বিকল্প নেই। কৃষির গুরুত্ব সম্পর্কে আমি একটি চীনা প্রবাদ উল্লেখ করছি ‘জাতীয় উন্নতি ও সম্পদ একটি গাছের ন্যায়- কৃষি তার মূল, শিল্প তার শাখা আর বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে পাতা ঝরে যায়, শাখা ভেঙ্গে পড়ে এবং গাছ মরে যায়।’ তাই বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য কৃষক, কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমন্বিত প্রয়াস চালানোর উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের কৃষির যে ব্যাপক উন্নতি, তা সম্ভব হয়েছে সরকারের উদ্যোগে বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে। বিশেষ করে, কৃষকদের অনুকূলে সার, সেচ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষি সহায়তা প্রদানের ফলশ্রুতিতে। কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গ্র্যাজুয়েটসহ অন্যান্য কৃষিবিদগণ।

তিনি আরো বলেন, অতি সম্প্রতি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষক ও গবেষণা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে ওহঃবৎ-ফরংপরঢ়ষরহধৎু ঈবহঃৎব ভড়ৎ ঋড়ড়ফ ঝবপঁৎরঃু (ওঈঋ) অন্যতম। যা নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত। এছাড়া ‘হাওড় ও চর ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে এবং কক্সবাজারে ‘সামুদ্রিক মাৎস্য বিজ্ঞান, মাঠ গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্র’ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। আরো আনন্দে কথা এই যে, সেশনজটমুক্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। প্রতি বছর এখানে অধিক হারে ছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একটি নতুন ছাত্রী হল, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণসহ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো. আলী আকবর। সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য দেন খ্যাতনামা প্রকৌশলী, গবেষক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, সিন্ডিকেট সদস্য, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির কো-অর্ডিনেটর, সকল অনুষদের ডিন, বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, গ্র্যাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

BAU CONVOCATION PIC 2

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, আপনাদের মেধাবী ও দক্ষ হাতের সঞ্জীবনী স্পর্শে প্রাণহীন ও গানহীন গ্রামীণ জীবন ব্যবস্থায় সঞ্চারিত হবে নতুন প্রাণ, যৃক্ত হবে নতুন সুরের গান-এখানে গড়ে উঠবে আমাদের কল্পলোকের সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুর পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর আব্দুল হামিদ সমাবর্তনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপরই স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো. আলী আকবর। এরপর রাষ্ট্রপতি ডিগ্রী প্রদান করেন। সমাবর্তনে ১৯১৯ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতক এবং ২৮৫১ জন শিক্ষার্থীকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়াও ১৩৯ জন শিক্ষার্থীকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়। স্নাতকে ৭ জন ও ¯œাতকোত্তরে ৮৬ জনকে গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানান বাকৃবি ভিসি। এরপর রাষ্ট্রপতি বাকৃবিকে ক্রেস্ট দেন, যা গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি।



মন্তব্য চালু নেই