টি-টোয়েন্টি নিয়ে মাশরাফির ‘ভাবনা’

শুক্রবার পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ।

বুধবার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে থাকছেন না মুমিনুল হক ও রুবেল হোসেন। টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডের নতুন মুখ মোস্তাফিজুর রহমান ও লিটন কুমার দাস। পুরো দল নিয়ে রাতে কৃত্রিম আলোতে মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল।

অনুশীলন শুরুর আগে টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মুর্তজা সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টি-টোয়েন্টির প্রস্তুতির কথা জানান। পাঠকদের জন্যে তা দেওয়া হল:

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিয়ে আমি ইতিবাচক চিন্তা করছি। তিনটি ওয়ানডে যেভাবে খেলেছি, এখানে ফরম্যাটটা আলাদা; তবে সবাই ইতিবাচক চিন্তা করছি।  টি-টোয়েন্টিতে শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  সব ফরম্যাটেই শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে টি-টোয়েন্টি সেটা আরো বেশি করে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আমরা যদি কাল (শুক্রবার) শুরুটা ভালো করি- তবে ভালোই হবে।

প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজে জয়ের পর, বাস্তবতার ভিত্তিতে টি-টোয়েন্টিতে জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: অবশ্যই আমরা জয়ের আশা করতে পারি। বোলাররা যেভাবে বোলিং করছে, ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ব্যাটিং করছে; সেভাবে খেলতে পারলে অবশ্যই আমাদের জেতা সম্ভব।  সামনে বিশ্বকাপ আছে, এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি।  টি-টোয়েন্টিতে প্রথম থেকেই শট খেলতে হবে। বোলারদের প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা শট খেলবে, তা আটকাতে হবে। এখনো আমরা বড় দলগুলোর মতো হতে পারিনি। তবে আশা করি আমরা শুরুটা ভালো করবো। টি-টোয়েন্টিতে ভালো করার জন্য আমাদের আত্মবিশ্বাস দরকার। আমাদের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস আছে।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে সাফল্যের হার কম থাকার কারণকে কিভাবে ব্যাখা করবেন?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: সব ধরনের ক্রিকেটেই আমাদের স্কিল এক রকম থাকে। টেস্টেও অনেকে  ওয়ানডের মতো খেলে রান করেছে। কারণ সবার একটা নিজস্ব ধরণ থাকে। সবাই সেটা খেলতে চায়। টি-টোয়েন্টি আমাদের সেভাবে খেলাই হয় না, সুযোগই হয় না। আমরা যতোটা ক্রিকেট খেলি, ঘরোয়া ক্রিকেটেও আমরা ওয়ানডে বা চার দিনের ম্যাচই বেশি খেলি। সুতরাং কম অনুশীলনের ব্যাপার তো অবশ্যই আছে। একই সঙ্গে টি-টোয়েন্টির জন্য আমরা প্রস্তুতি নিতেও পারি না। ওয়ানডে বা টেস্টের জন্য যেভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। বড় দলগুলোতে দুই একজন খেলোয়াড় থাকে, যারা টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ। আমাদের ওই রকম নাই। তরুণ ক্রিকেটারদে এখন থেকেই ওভাবে তৈরি হতে হবে।  টি-টোয়েন্টিতেও বড় দল হয়ে উঠার ক্ষমতা আমাদের অবশ্যই আছে।

প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজ কতটুকু আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: ওয়ানডে সিরিজ জেতায় আমরা বেশি আত্মবিশ্বাসী। যদিও গত দেড়-দুই বছর আমাদের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ফফল ভালো না। সাকিব ছাড়া কেউ বেশি টি-টোয়েন্টি খেলতে পারিনি। তারপরও আমরা আত্মবিশ্বাসী। সবাই ভালো খেলছে। এখন আমরা যদি ম্যাচের শুরুটা ভালো করতে পারি, তবে আমাদের ম্যাচটি ভালোই হবো।

প্রশ্ন: ওয়ানডের আগে ফেবারিট ছিল বাংলাদেশ, টি-টোয়েন্টির আগে এগিয়ে কারা?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: আমার মনে হয় দুই দল সমান অবস্থানে আছে। আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলিনি। বড় দলগুলোর সঙ্গে তেমন কোনো ম্যাচ জিততে পারিনি। তারপরও আমার বিশ্বাস আমরা সমান অবস্থানে আছি। আমরা ওয়ানডেতে যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলতে পারলে, ম্যাচটি আমরাও জিততে পারি।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ক্রিকেটে তরুণদের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের খেলা আয়োজন করা যায় কিনা:

মাশরাফি বিন মর্তুজা: অবশ্যই… এটা হলে খুব ভালো হয়। ২০১৫ বিশ্বকাপের জন্য আমরা অনেক অনুশীলন করেছি। ওয়ানডের মতো ম্যাচ-সিচুয়েশন তৈরি করে আমরা অনুশীলন করেছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখেও আমাদের নানা ধরনের প্রস্ততি নিতে হবে। তরুণদের যতো বেশি  ম্যাচ খেলানো হবে, ততো ভালো কিছুর সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমার মনে হয় পরিকল্পনা অবশ্যই হবে। সব দিক থেকেই আমাদের ওপর চাপ আছে। ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলতে আমাদের র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে হবে। বিষয়টি আমাদের বড় চিন্তার বিষয়। যেভাবে খেলছি, সেভাবে খেলে যেতে হবে। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসছে। সব দিক চিন্তা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: দলে যারা হার্ড হিটার আছে, তারা কি টি-টোয়েন্টির চাহিদা মেটাতে কতোটা সক্ষম?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: সাব্বির রহমান রুম্মান কিন্তু দারুণ খেলতে পারে, আমার মনে হয় সে বিশ্বের অন্যতম সেরা হার্ডহিটার। সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম- ছোট হলেও বড় শট খেলতে পারে। সাকিবও আছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রথম পাঁচ-ছয়জন কিন্তু বড় শট খেলতে পারে। সমস্যা হলো, ওয়ানডেতে সেট হওয়ার সুযোগ আছে, টেস্টে তো সারাদিনই সময় থাকে; কিন্তু টি-টোয়েন্টি পাঁচ-ছয় বলের বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। উইকেট পড়ুক বা যা-ই হোক, শট খেলতে হবে। এখানে অনুশীলন বা ম্যাচ খেলার সীমাবদ্ধতা (পিছিয়ে পড়ার) বড় একটা কারণ হতে পারে। এখানে অভিজ্ঞতার খুব একটা প্রভাব থাকে না, মাঠে কে কতটা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তার ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু।

প্রশ্ন: দলকে কিভাবে সাজাবেন?

মাশরাফি বিন মর্তুজা:  এখনো আসলে টিম ঠিক হয়নি। টি-টোয়ন্টি এমন একটি জায়গা এখানে সব খেলোয়াড়দের দেখার সুযোগ থাকে না।  আমাদের বিশ্বকাপের সেরা দলটা এখন থেকেই চিন্তা ভাবনায় আসতে হবে যে, কারা ভালো করছে, তাদেরকে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া, যাতে তাদের অনুশীলনের কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকে, যাতে সেরা প্রস্তুতি নিয়ে বড় আসরে যেতে পারে। ২০১৫ বিশ্বকাপের আগে আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, সেভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিলে আশা করি ভালো কিছু খেলোয়াড় পাবো। যারা নতুন আসছে, তাদের কোনো না কোনো ধাপে দেখা যাবে।

প্রশ্ন: লিটন- রনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টি-টোয়েন্টি খেলার জন্যে অভিজ্ঞ ?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: অবশ্যই অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞ বলেই তাদের দলে নেওয়া হয়েছে। তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এসেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক চাপ থেকে। এখানে মিডিয়ার চোখ থাকে। ফলে চাপ না নিতে চাইলেও এখানে অনেক চাপ থাকে। আমি মনে করি, তারা যোগ্য বলেই দলে এসেছে। সবাই চিন্তা ভাবনার মধ্যে আছে। তারা এখনও নতুন। ফলে এখনই তাদের বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। যতো সময় যাবে, ততোই তারা সুযোগ পাবে।

প্রশ্ন: সেরা একাদশে কি একজন বেশি ব্যাটসম্যান খেলবে?

মাশরাফি বিন মর্তুজা:  বিশ্বের সবদলই সাধারণ ছয়জন করে ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলে। টি-টোয়েন্টিতে আটজন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা খুবই নেতিবাচক, আমি মনে করি। আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি বোলারদের খেলা। বোলাররাই এখানে জিতিয়ে দিতে পারে। আমার মনে হয় না অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান দরকার আছে। তবে দলের প্রয়োজন হলে নেওয়া যেতে পারে, তখন তো আসলে দশজন ব্যাটসম্যানও নেওয়া যায়। সব কিছুই নির্ভর করছে আমাদের আত্মবিশ্বাস এবং আমাদের পারফরমেন্সের ওপর। দল নিয়ে এখনো ভাবিনি। তিনজন পেসার নিয়ে খেলে আমরা জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে সফল। এটাই ঠিক চিন্তা। আমারা যদি পেসারদের সমর্থন না দেই, অথচ তারই ম্যাচ জেতাতে পারে। আমার বিশ্বাস তারাই ভালো করবে।

প্রশ্ন: পাকিস্তান ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিতে বেশি শক্তিশালী?

মাশরাফি বিন মর্তুজা: অবশ্যই।  টি-টোয়েন্টিতে ওরা অনেক দিন ধরে খেলছে। আফ্রিদি দেড়শ’র উপরের ম্যাচ খেলেছে। ওরা অনেক অভিজ্ঞ। তারপরও আমি মনে করি আমরা যদি মাঠে ভালো খেলতে পারি, তবে ভালোই হবে। আমার বিশ্বাস, কখনো কখনো ভালো খেললে অভিজ্ঞতাকেও হারানো যায়। টি-টোয়েন্টিতে অভিজ্ঞতা সব সময় কাজে লাগে না। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত টি-টোয়েন্টিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেভাবে খেলছি, তা বজায় রাখতে পারলে আমরা ভালো করতে পারবো।



মন্তব্য চালু নেই