টিকটিকি, বালি, টিউবলাইট, পেট্রল সবই খান তিনি

বিশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী তার রম্যরচনায় খাদ্য ও খাদকের নানা স্তর বিন্যাস করেছেন। যা বাঙালি পাঠকের বিশেষ নজর কেড়েছে। বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারকে করেছে আরো রসসমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট।

মুজতবা আলীর মতে, খাদ্যের হাজারো প্রকার থাকলেও খাদক মূলত দুই প্রকারের। ভোজনপটু ও ভোজনবিলাসী। ভোজনবিলাসীরা হরেক রকমের খাবার সামনে থাকলেও বেছে বেছে খায়। আর ভোজনপটু যারা তাদের কোনো বাছ-বিচার নেই। আহার উপযোগী হাতের কাছে যা পায় তাই টপাটপ হজম করে। এরা খাবার সামনে থাকলে ভরা পেটেও খাওয়া শুরু করে।

তাকে খুব বেশি আপত্তি থাকার কিছু নেই। খাওয়ার দরকার খাক। খাবেই তো…। কিন্তু এ কেমন খাদক! এ কেমন ভোজনপুট! যিনি মাছ-মাংস-রসগোল্লাই শুধু নন, সামনে পেলে টিকটিকি, বালি, টিউবলাইট, পেট্রল পর্যন্ত সাবাড় করে দেন!

রাক্ষুসে পেট বটে। যা খান তাই হজম হয়ে যায়! বালি, পাথর, সিমেন্ট, কাচ, টিকটিকি, আরশোলা, মাটি, ঘাস থেকে শুরু করে কী নেই তার খাদ্য তালিকায়। মানুষের পেটে এতকিছু? এক বা দু’বছর তো নয়, টানা কয়েকবছর ধরে এসব খাবার খেয়েই দিব্যি বেঁচে আছেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা আবদুল্লা।

পেশায় ক্যারাটে ও যোগা বিশেষজ্ঞ আবদুল্লা কিন্তু ছোটো থেকে এরকম ছিলেন না। আর পাঁচজনের মতো তিনিও স্বাভাবিক খাবার খেতেন। কিন্তু, তার যখন ১৮ বছর বয়স তখন পরিবারের সদস্যরা মারা যান। একা যুবক তখন দিশেহারা। কী খাবেন? নেই কোনও অন্নসংস্থান। খিদে মেটাতে বালি, মাটি এইসব খাওয়া শুরু করেন। তখন থেকেই নাকি নিজের আশ্চর্য হজম ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন আবদুল্লা। তামিলনাড়ু থেকে চলে আসেন বেঙ্গালুরু। ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

কিন্তু, এসব খেয়ে কোনও সমস্যা হয় না? প্রশ্নের উত্তরে হাসতে হাসতে আবদুল্লা বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। তবে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারব না। তা বলে ভাববেন না যে, শুধুমাত্র টিকটিকি, পাথর এসবই খাই। ভাত, ডাল, রুটিও চলে। তবে পরিমাণে অনেকটাই বেশি লাগে সেসব।’

আবদুল্লার খাদ্য হজম করার এমন আশ্চর্য ক্ষমতা দেখে কে না বিস্মিত হবেন। তেমন হয়রানির শিকার চিকিৎসকরাও। কীভাবে এসব হজম হয় তা রহস্য চিকিৎসকদের কাছেও। যদিও আবদুল্লা নিজে একে রহস্য বলতে রাজি নন। তার মতে, কোনও অলৌকিক শক্তির জেরেই নাকি আশ্চর্য হজমশক্তির অধিকারী তিনি।

চারপাশের ভিড়ে চলার পথে অনেক ভোজনপটু মানুষেরই সাক্ষাত মিলে। কিন্তু যিনি টিকটিকি, বালি, টিউবলাইট, পেট্রলকে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করেছেন তাকে কোন ধরনের ভোজনপটু বলা চলে? বিস্ময়ের চোখ দুটি বন্ধ করলে এমন জিজ্ঞাসা আপনাকেও তাড়া করতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই