উপাচার্যসহ শিক্ষক লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ ও ছাত্রলীগের আন্দোলন

টালমাটাল রাবি ক্যাম্পাস

সংসদ সদস্য এবং মহানগর আওয়ামী নেতাদের হাতে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছে। এদিকে, ক্যাম্পাসে এমন অবস্থার মধ্যেই ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রলীগ। যার ফলে এখন অনেকটাই টালমাটাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

উপাচার্যসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে গতকাল রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, মৌন মিছিল ও সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে থেকে একটি মৌন মিছিল বের করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক জাহানুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন, শিক্ষক সমিতিরি সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুনুর রশীদ তালুকদার, যুগ্মআহ্বায়ক অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, উাপাচার্যকে লাঞ্ছিত করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নজিরবহীন। এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সমাবেশ চলাকালে সিনেট ভবনের সামনে শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগ মমতাজ উদ্দিন কলাভবনের পশ্চিম গেটের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন থেকে উপাচার্য ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নীলুফার সুলতানা, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ওয়ারদাতুল আকমামসহ তিন শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনে থেকে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটি র‌্যালি বের করেন। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিনেট ভবনের সামনে মানববন্ধনে মিলিত হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শর্মিষ্ঠা রায়, অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন, উপাচার্যের দফতরে ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসনের জন্য হুমকি। এ ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে এক হয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান বক্তারা।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাঈল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকা, অধ্যাপক সাইফুদ্দীন চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী, অধ্যাপক আখতার হোসেন, অধ্যাপক তারিকুল আহসান, সহকারী অধ্যাপক অনুপম হীরা ম-ল, উদয় শংকর বিশ্বাস, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। মানববন্ধন থেকে উপাচার্য ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িত এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। এছাড়া তাদের দল থেকে বহিস্কার করে শাস্তিমূূলক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিরুদ্ধে শিক্ষকের প্রতিবাদ : বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দফতরে গত ১৬ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাহাদাৎ হোসেনকে মারার জন্য তেড়ে যাওয়া ও তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজ্ঞান অনুষদের ডীন হাবিবুর রহমান। রোববার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শিক্ষকতার জন্য অমর্যাদাকর কোনো ধরনের ঘটনা ঘটানো আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও তার সহযোগীদের দ্বারা সেদিন সংঘটিত ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে আড়াল করতে ও মিথ্যা সাফাই গাইতে তিনি গত শনিবার মহানগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সেদিন শাহাদাত হোসেন উপাচার্য কক্ষে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন। তাই তাকে শান্ত করার জন্য আমি এগিয়ে যাই এবং তার হাত ধরে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

রাজশাহীতে অবস্থিত শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজটিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় রাবির কলেজ পরিদর্শক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করে। সেই কলেজটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন সাংসদ ওমর ফারুক। জরিমানার থেকে কলেজকে মুক্ত করার দাবি নিয়ে গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালযের উপাচার্য দফতরে আসেন তিনি। এসময় দাবি না মানায় উপাচার্যকে লাঞ্ছিত করেন তিনি।
একইভাবে ১৬ এপ্রিল দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগের দাবি নিয়ে উপাচার্য দফতরে এসে তাকে ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন।

ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন : এদিকে ক্যাম্পাসে এই টালমাতাল অবস্থার মধ্যেই ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এনিয়ে রোববার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্রলীগের ৭ দফা দাবি মানা না হলে আজ সোমবার থেকে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা।

এসময় সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী নেতাকর্মীদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় ছাত্রলীগের অবস্থান জানতে চাইলে সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বলেন, ‘ওই বিষয় নিয়ে এখন আমরা ভাবছি না। আমরা আমাদের অস্তিত্ব টিকে রাখার আন্দোলনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনের অন্যদের মধ্যে রাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও সাবেক যুগ্মসম্পাদক সাইদুল ইসলাম রুবেল, সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু, যুগ্মসম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই