উখিয়া, কক্সবাজারের কিছু খবর

টানা অবরোধের কারণে উখিয়ার ইনানী সৈকতে পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস

বিএনপি সহ ২০ দলের ডাকা টানা অবরোধের ফাঁদে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। একই সাথে ব্যবসা-বানিজ্যেও জনজীবনে ধ্বস নামতে শুরু করেছে। ইনানী বীচের পর্যটক কটেজ গুলোর ব্যবসায়ীরা এক প্রকার হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে কয়দিন ধরে। এ কারণে তাদের হোটেল ব্যবসার মন্দাভাব চলছে।

অবরোধের কারণে বিভিন্ন উপায়ে ইনানী সৈকতে বেড়াতে আসা কিছু কিছু পর্যটক আকাশ ও সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারলেও আটকা পড়ে রয়েছে শত শত দেশী-বিদেশী পর্যটক। নানা ব্যস্ততার মাঝেও পরিবার পরিজন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে একান্ত কিছু সময় কাটাতে ছুটে আসেন পাথুরে বীচ ইনানীতে। প্রকৃতি ও আধুনিকতার মেল-বন্ধনে যারা একান্ত কিছু সময় কাটাতে চান তাদের জন্য কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী পাথুরে বীচ পর্যটন স্পট ভিন্ন এক হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

নয়ানাভিরাম এ পর্যটন স্পটের প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকনের জন্য প্রতিদিন ছুটে আসছেন দেশী-বিদেশী হাজারো পর্যটক। তবে টানা অবরোধের ১২ দিনে পর্যটন ব্যবসায়ী ও হোটেল-কটেজ মালিকদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছে। যদি নিবিঘ্নে পর্যটকরা আসা-যাওয়া করতে পারতো তাহলে এ পর্যটন খাত থেকে ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হতো। দরিয়া নগরের হোটেল মারম্যাড কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, পর্যটনের ভরা মৌসুমে টানা অবরোধের কারণে পর্যটক আসতে না পারায় এ ব্যবসায় কিছুটা ধ্বস নেমেছে। সরকার ইতি পূর্বে এ পর্যটন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেতো বলে তিনি জানান।

বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে উখিয়ার ইনানী সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে মাইক্রোবাস যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি চালিত টেক্সী, মোটর বাইক, ব্যাটারী চালিত টমটম গাড়ীসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হযে ইনানী পাথুরে বীচ দর্শনে আসা যায়। মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে ইনানী ভ্রমণে আসলে যাত্রীবাহী গাড়িতে জনপ্রতি মাত্র ৩০ টাকা ভাড়ার প্রয়োজন হয়। আর যারা সিএনজি চালিত টেক্সী কিংবা ব্যাটারী চালিত টমটম গাড়ী নিয়ে রিজার্ভ আসে তাদের ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়ার প্রয়োজন হয়। ব্যাটারী চালিত মোটর বাইক নিয়ে একসাথে ৩ জন আসলে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা ভাড়ার প্রয়োজন হয়।

ভোর সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ীর সুব্যবস্থা থাকে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ, সৈকত পুলিশ, কমিউনিটি পুলিশসহ স্থানীয় জনসাধারণ আন্তরিকতার সহিত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। হিমছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প থাকায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে যাতায়াতে কোন ধরনের ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের ঘটনা নেই বললেই চলে। পর্যটকদের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা জোরদার থাকায় এখানে পর্যটকদের আসতে কোন অসুবিধা নেই। তাই পর্যটকরা মনের আনন্দে ভ্রমণ করতে এখানে ছুটে আসেন।

কক্সবাজার থেকে ইনানী ভ্রমণে আসলে পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রথমে চোখে পড়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার দরিয়ানগর পার্ক, হিমছড়ি ঝরনা, কানারাজার গুহা, রাখাইনদের টং ঘর, হ্যাচারীর জোন শিল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত সেই দর্শনীয় ষ্পট চেংছড়ি, ইনানী জাতীয় উদ্যান, জাহাজপুরার নজর কাড়া জামবাগান,  জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে গড়ে তোলা নিদানীয়া পিকনিক স্পট, বিভিন্ন চিংড়ি উৎপাদনকারী হ্যাচারী ও প্রাকৃতিক পাহাড়।

পর্যটকরা ইনানী ভ্রমণে আসলে মনের আনন্দে সাগরের উত্তাল ঢেউ ও নজর কাড়া প্রাকৃতিক পাথরের স্তুপে নির্জনে বসে সময় প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারে। জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী বলেন, বিএনপিসহ ২০ দলের অবরোধের কারণে আবারো হুমকির মুখে পড়েছে দেশের পর্যটন খাত। এতে সরকারের একদিনেই ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম অবরোধের কবলে পড়ে পর্যটকদের সাময়িক ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, ইনানীতে আসা পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। পর্যটক আসতে না পারার কারণে এ পর্যটন খাতে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এদিকে পর্যটন শহর  উখিয়ার কোটবাজার সৈকত সড়কে পর্যটন গেইট না থাকায় দেশী বিদেশী পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কোটবাজার ষ্টেশনে একটি পর্যটন গেইট স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। এমন অভিমত সচেতন মহলের।
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ১১২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২৫ কিলোমিটার এলাকা উখিয়া উপজেলার মধ্যে পড়েছে। এ ছাড়াও এ উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের রেজুর মোহনা, ইনানী সমুদ্র সৈকত, কানারাজার গুহা, মনখালী পর্যটন স্পট সহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে এসব দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য শত শত দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। এসব দর্শনীয় স্থানে যাতায়াতের মাধ্যম হচ্ছে, কক্সবাজার- মেরিন ড্রাইভ সড়ক ও কোটবাজার- মনখালী সৈকত সড়ক। এক পর্যটক জানান, ২ দিন আগে চট্টগ্রাম থেকে স্ব-পরিবারে কক্সবাজার ভ্রমনে এসেছিলেন। সেখান থেকে আরাকান সড়ক হয়ে উখিয়ার ইনানীর উদ্যোশ্যে তারা যাত্রা করেন। তারা ইনানী পর্যটন স্পটে যাতায়াতের রাস্তা চিহ্নিত করতে না পেরে বালুখালী পর্যন্ত চলে যায়। পরে স্থানীয় জনসাধারণের কাছ থেকে দিক নির্দেশনা নিয়ে ইনানী সমুদ্র সৈকত দর্শনে যেতে পেরেছেন। এ পর্যটক দম্পত্তির মত অনেক পর্যটক প্রতিনিয়ত দিগ ভ্রান্ত হয়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তাদের দাবী, কোটবাজার ষ্টেশনের সৈকত সড়কে পর্যটক গেইট নিমার্ণ করলে পর্যটকদের বিড়ম্বনার অবসান হবে, পাশাপাশি এটি সৌন্দর্য বর্ধণে ও কাজ করবে।

এ ব্যাপারে প্রশাসনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে কোটবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী জানান।

 

উখিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত : আহত ৩
কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার বরইতলী এলাকার গতকাল শুক্রবার সকালে উখিয়ার মাইক্রো চালক জয়নাল, শিশু ও নারীসহ ৪ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা কক্সবাজারগামী পিকনিক বাসের সাথে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে এ নির্মম সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত জয়নাল উখিয়ার রতœাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া তেলীপাড়া গ্রামের আলী আকবর ছেলে বলে জানা গেছে।

এদিকে মেরিন ড্রাইভ সড়কের রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকায় মোটর সাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংর্ঘষে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে উখিয়ার ব্যবসায়ী ফলিয়াপাড়া গ্রামের রশিদ আহমদের ছেলে সোলতান আহমদ (৩৩) প্রকাশ সোনা মিয়া। ওই দিন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় কক্সবাজারগামী মোটর সাইকেল আরোহীর সাথে টেকনাফগামী ট্রাকের মুখোমুখি সংর্ঘষে এ সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এছাড়া ও শুক্রবার সকাল ৬টা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের জাদিমোরা এলাকায় এক র্দুঘটনায় ৩ জন আহত হয়। আহতরা হলেন টেকনাফ উপজেলার পল্লানপাড়া গ্রামের মোঃ শাকিব (১৫), একই গ্রামের জাহিদ হোছন (২৬) ও কিশোরগঞ্জের রুবেল (২২)। আহতদের উদ্ধার উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান সড়ক দুর্ঘটনার উখিয়ার ২জন নিহতসহ ৩ জন আহত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন।

টানা অবরোধের প্রভাব উখিয়ার বাজারে
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও গ্রামে সবজি বাজারজাত করণ করতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষেতে গরু-ছাগল লেলিয়ে দিয়েছে। অথচ উখিয়ার হাটবাজারে প্রতিটি শাক-সবজি বিপরীতে কেজি প্রতি ৮/১০ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় নিু আয়ের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নাভিশ্বাসে উঠেছে। অনেকেই বিরক্তিকর মেজাজে বলছেন এভাবে অবরোধ চলতে থাকলে খেটে খাওয়া মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে। UKHIYA PIC 16.01.2015

জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারী থেকে বিরোধীদলের টানা অবরোধে যোগাযোগ, ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে শ্রমজীবি মানুষেরা কর্মসংস্থানহারা হয়ে অনেকেই মানবেতর দিন যাপন করছে। দৈনিক আয়ের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের পরিবারে নেমে এসেছে অসহনীয় দূর্ভোগ। এমন একজন শ্রমিক যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল গাড়ী থেকে লোড আনলোড করে যা পায় তা দিয়ে সংস্কার চালায়। সিকদার বিল গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের হাসেম নামের ওই শ্রমিক ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানায়, তার ঘরে ৩ মেয়ে ২ ছেলে ১ স্ত্রী নিয়ে সাত জনের সংসার। তার প্রতিদিন বাড়ি খরচ খাতে ব্যয় হয় গড়ে ৩শ’ টাকা। গত ১২ দিন যাবত সে কাজ করতে না পারায় তাকে এক বেলা খেয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এভাবে অনেকেই অবরোধের গ্যাড়কলে পড়ে দুঃসহ জীবন যাপন করলেও কে শুনে কার কথা?

এদিকে টানা অবরোধের কারণে উখিয়া হাটবাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের বিপরীতে ৮/১০ টাকা করে বেড়ে যাওয়ায় শ্রমজীবি মানুষের নাকাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, যে আলু কেজি প্রতি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে সে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। পাশাপাশি মরিচ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, শিম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, শিমের বিচি ৮০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজি ব্যবসায়ী আলি হোছন জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তদার ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে তারা সবজি সরবরাহ এনে স্থানীয় ভাবে বাজারজাত করছে। ১০/১২ দিন যাবত সবজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সবজির দাম বেড়েছে।

এছাড়া মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার কারণে সাগরের মাছ স্থানীয় হাটবাজার গুলোর জন্য দু¯প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছ ব্যবসায়ী ফরিদ আহমদ জানান, ভটভটি গাড়ী  দিয়ে কক্সবাজার থেকে মাছ সরবরাহ আনলেও তার দাম পড়ে যায় দ্বিগুন। ছোট খাট বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দাম স্বাভাবিক থাকলেও সামুদ্রিক মাছের দাম আকাশচুম্বী। এ বাজারে ছোট ইলিশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ টাকা দরে। অথচ অবরোধের আগে এ ইলিশ ২৫০/৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিমত। টানা অবরোধের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, বিরোধী দল অযৌক্তিক অবরোধ দিয়ে জনগণের আস্তা হারাচ্ছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, সারাদেশ ব্যাপী চলমান ২০ দলের কঠিন কর্মসূচীর জন্য সরকার দায়ী। যেহেতু তারা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ না করলে হয়তো এ কর্মসূচী আসত না।



মন্তব্য চালু নেই