টাকা চুরির ঘটনা আড়াল করতেই নিজামীর রায় প্রকাশ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা বর্তমানে ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান চাপের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেছেন।

অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গভর্নরকে এভাবে বিদায় নিতে হল এবং তা মেয়াদ শেষের কয়েক মাস আগে। গভর্নরের সরে দাঁড়ানোর পরেও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ করার দাবি উঠেছে।

এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এমনকি তার মৃত্যুর পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে মতিউর রহমান নিজামীকে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এ তার মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় লাল সালুতে মোড়া মৃত্যু পরোয়ানা ও রায়ের কপি কারাগারে এসে পৌঁছায়।

এ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) সুযোগ পাবেন নিজামী। রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাও চাইতে পারবেন। তার দুই আবেদন নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নেবে।

রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় যখন পুরো দেশ সরকারের সমালোচনায় মুখোর ঠিক সে সময়ে এমন রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনা দূরে সরিয়ে দিতেই এ রায় দেয়া হয়েছে।

কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন হলেও বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ সবসময় থাকে বলে দেশের প্রধান বিরোধী জোট ২০ দলসহ অভিযোগ করে আসছে। টাকা চুরির ঘটনার সমালোচনার মুখে পরে রায় প্রকাশেও সরকারের ভুমিকা রয়েছে বলে মত দেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, হতে পারে সরকার এ ধরনেই প্ল্যান করেছে। তবে এ ধরনের প্ল্যান করে লাভ নেই। রিজার্ভের টাকা চুরির বিষয়টি আন্তর্জাতিক ঘটনা হয়ে গেছে। এটা ধামাচাপা দেয়া যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়। ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারার ২৯ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে আলোচনার ঝড় ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই অর্থ চুরির বিষয়টি টের পেলেও তা গোপন করে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি জানতে হয় প্রায় এক মাস পর, তাও আবার পত্রিকা পড়ে। এ পর্যন্ত বিশ্বে ব্যাংকের টাকা চুরির যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ঘটনাকে অন্যতম বড় চুরির ঘটনা বলা হচ্ছে। বিডি24লাইভ



মন্তব্য চালু নেই