টাইমস্কেল বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভায় উঠছে পে-স্কেল
অবশেষে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নতুন পে-স্কেল অনুমোদনের জন্য সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উঠতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সচিব কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত কয়েকদিন ধরেই নতুন পে-স্কেল নিয়ে অর্থবিভাগের সচিবের কার্যালয় কাজ করছে। বুধবার দুপুরে অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান। তবে সেখানে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে সর্বশেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে উন্নীত হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজেদের সম্মানিত বোধ করতেন। এ ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়া হলে তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে। বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর সিদ্ধান্ত হবে। যারা এমন সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে প্ররোচিত করছে তারা সরকারের ভাল চাচ্ছেন না।
পে-স্কেলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না। এমন সংবাদ প্রচার হওয়ার পর থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারিরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। অর্থমন্ত্রী আশ্বাসও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সত্যি বাদ দেওয়া হলে তা হবে দুঃখজনক।
তিনি বলেন, টাকার অংককে ভিত্তি ধরে অর্থমন্ত্রণালয় সিলেকশন গ্রেড বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সিলেকশন গ্রেড না পেলেও বার্ষিক ইনক্রিমেন্টে টাকার পরিমান বাড়বে কিন্তু বেতন স্কেলের গ্রেড উন্নতি থেকে বঞ্চিত হতে হবে। কেননা নতুন নিয়মে প্রমোশন ছাড়া উর্ধ্বতন গ্রেডে যাওয়ার কোন সুযোগ রাখা হচ্ছে না। কিন্তু এই সুযোগটি সিলেকশন গ্রেডে উন্নীত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতো। এতে কর্মকতা-কর্মচারিরা সব দিক থেকে লাভবান হতো।
সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক বেতন সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন আট হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে পে-কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে বেতনের ধাপ বা স্কেল ২০টিই বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ার পক্ষে সুপারিশ করে। এ কমিশন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের বেতন মাসিক এক লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছিলেন।
সচিব কমিটি তা কমিয়ে ৯০ হাজার করার প্রস্তাব করেছে। একইভাবে কমিশন সিনিয়র সচিবদের মাসিক বেতন নির্ধারিত ৮৮ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছিল, সচিব কমিটি তা প্রস্তাব করেছে ৮৪ হাজার টাকা। সিনিয়র সচিবদের বেতন প্রস্তাব করেছে ৭৮ হাজার টাকা। ফার্স্ট গ্রেডের বেতন হবে ৭৫ হাজার টাকা। এখানে ফার্স্ট গ্রেডের হিসেবে বিভাগীয় প্রধানদের বিবেচনা করা হবে। এটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।
পঞ্চম গ্রেডের বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা। ষষ্ঠ গ্রেডের করা হয়েছে ৩৬ হাজার টাকা। ৪-৫ গ্রেডের (এন্ট্রি লেভেল) বেতন হবে ২২ হাজার টাকা। ১৯তম গ্রেডের বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে আট হাজার ৫০০ টাকা। ২০তম গ্রেডের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে আট হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীরা বাংলা নববর্ষে একটি উৎসব ভাতা পাবেন বলে সচিব কমিটি প্রস্তাব করেছে, যা কিনা বেসিক বা মূল বেতনের সমতুল্য হবে।
নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের (প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বাহিনী ও উন্নয়ন প্রকল্পে থাকা জনবল) শুধু বর্ধিত বেতন দিতেই ব্যয় করতে হবে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ভাতা দেয়া হলে তার জন্য ব্যয় হবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক হিসাবে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সচিব কমিটি দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বর্ধিত মূল বেতন এবং দ্বিতীয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বর্ধিত ভাতা দেয়ার কথা বলেছে। পে-কমিশন তাদের সুপারিশে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদ্যমান ২০ গ্রেডের পরিবর্তে ১৬ গ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
এর মধ্যে প্রথম গ্রেডে বিদ্যমান বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রেডে ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ২৯ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা, চতুর্থ গ্রেডে ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৫২ হাজার টাকা, পঞ্চম গ্রেডে ২২ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকা, ষষ্ঠ গ্রেডে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩৭ হাজার টাকা, সপ্তম গ্রেডে ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩২ হাজার টাকা, অষ্টম গ্রেডে ( বিদ্যমান ৮ ও ৯ গ্রেড এক করে) ১২ হাজার ও ১১ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা, নবম গ্রেডে আট হাজার টাকা থেকে ১৭ হাজার টাকা ও দশম গ্রেডে ৬ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ১১শ গ্রেডে (বিদ্যমান ১২ ও ১৩ গ্রেড এক করে) ৫ হাজার ৯০০ ও ৫ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১১ হাজার ৫০০ টাকা, ১২শ গ্রেডে ৫ হাজার ২০০ থেকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা, ১৩শ গ্রেডে ৪ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা, ১৪শ গ্রেডে ৪ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা, ১৫শ গ্রেডে (বিদ্যমান ১৭ ও ১৮ গ্রেড এক করে) ৪ হাজার ৫০০ ও ৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৯ হাজার টাকা এবং ১৬শ গ্রেডে (বিদ্যামন ১৯ ও ২০ গ্রেড এক করে) ৪ হাজার ২৫০ ও ৪ হাজার ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ২০০ টাকার করার সুপারিশ করেছে।
পে-স্কেল মন্ত্রিসভায় যখনই অনুমোদন হোক তা ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়ন হবে বলে অর্থমন্ত্রী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের একাধিকবার আশ্বস্ত করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই