টাইগার দলের ওরা ১১ জন কে কোথায়?

একটি রাত, নতুন একটি সূর্যোদয়, এরপরই শততম টেস্টের রোমাঞ্চ। বাংলাদেশের মাইলফলক ম্যাচের মঞ্চ হতে প্রস্তুত কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়াম। অপেক্ষা অনন্য অর্জনের জন্য মাঠে নামার। এই পথ পরিক্রমায় ৯৯টি টেস্ট খেলে এসেছে বাংলাদেশ। শুরুটা হয়েছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর, ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচে খেলা ১১জন এখন ইতিহাসের অংশ। অবসরের পর তাদের কেউ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত আছেন অন্যরূপে, কেউ নিজেদের মত জীবন ধারণ করে চলেছেন। দেখে নিন ইতিহাসের সেই নায়কেরা এখন কোথায় কি করছেন-

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ: বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে উদ্বোধনীতে নামা দুজনের একজন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। তিনি ঐতিহাসিক টেস্টটিসহ মোট ৩ বার দেশের জার্সিতে সাদা পোশাকে নেমেছেন। ২০০৪ সালে খেলা ছাড়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানের বয়স এখন ৪০! অবসরের পর ক্রিকেট থেকে দূরেই আছেন। নারায়ণগঞ্জে ক্যাবলসের ব্যবসায় মন দিয়ে জীবন এগিয়ে নিচ্ছেন।

মেহরাব হোসেন অপি: শাহরিয়ারের উদ্বোধনী সঙ্গী মেহরাব হোসেন অপি ক্যারিয়ারে মোট ৯টি টেস্ট খেলেছেন। আছে ৭১ রানের একটি ইনিংস। ২০০৩ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের খেলা ছাড়ার পর পারিবারিক ব্যবসায় মন দিয়েছেন। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ৩৮ বছর বয়সী এই তারকাকে মাঝে টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গেছে।

হাবিবুল বাশার সুমন: অভিষেক টেস্টে খেলা ১১জনের মধ্যে হাবিবুল বাশার সুমনই টেস্ট ক্যারিয়ার সবচেয়ে বেশি এগিয়ে নিতে পেরেছেন। বাংলাদেশের জার্সিতে প্রথমজন হিসেবে ৫০তম টেস্ট খেলার অর্জনই তারই। তিন হাজারের ওপর টেস্ট রান আর তিন সেঞ্চুরির সঙ্গে ২৪টি ফিফটি নিয়ে অবসরে গেছেন ২০০৮ সালে। ৪৪ বছর বয়সী এই সাবেক বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: বাংলাদেশের

অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ১৪৫ রানের সেই ইনিংসটা লাল-সবুজদের টেস্ট পতাকাকে উঁচু করে ধরেছিল। মোট ১৩টি টেস্ট খেলে অবসরে গেছেন ২০০২ সালে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকছেন। সঙ্গে আইসিসির গেম ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের হয়েও একই দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘ সময় সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করছেন ৪৯ বছর বয়সী বুলবুল।

আকরাম খান: টেস্ট ক্যারিয়ারটা ৮ ম্যাচের বেশি এগোয়নি। তবে সেটি গল্পের পুরোটা বলে দেয় না। বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যে পর্যায়ে, সেই পথে শুরুর দিকে যারা লাল-সবুজদের সবচেয়ে বড় তারকা ছিলেন, আকরাম খান তাদের অন্যতম একজন। ২০০৩ সালে খেলা ছেড়েছেন বিশালদেহী এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরে অবশ্য ভিন্ন রূপে ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়েছেন, ক্রিকেট প্রশাসক হয়ে। বর্তমানে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান তিনি। আকরাম এর আগে ছিলেন বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান।

আল শাহরিয়ার রোকন: তার সময়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় যেকজন ক্রিকেটারের নাম উচ্চারিত হতো, আল শাহরিয়ার রোকন তাদের অন্যতম। কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ১৫ টেস্টের বেশি বাড়েনি ক্যারিয়ার। ২০০৩ সালে খেলা ছাড়ার পর সেভাবে ক্রিকেটে থাকেননি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে সাত বছর ধরে নিউজিল্যান্ডে বাস করছেন স্থায়ীভাবে। নেপিয়ারে প্রবাস জীবন চলছে ব্যবসা করে। ৩৮ বছর বয়সী এই সাবেক নেপিয়ারের স্থানীয় ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গেও জড়িয়েছেন টুকটাক।

নাঈমুর রহমান দুর্জয়: বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে ইনিংসে ছয় উইকেট নিয়েছিলেন। ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও অফস্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারটা অবশ্য ৮ ম্যাচের বেশি এগোয়নি। ২০০২ সালে খেলা ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। হয়েছেন সংসদ সদস্যও। ৪২ বছর বয়সী এই সাবেক ক্রিকেটার বর্তমানে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা বিভাগের প্রধান হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন তিনি।

খালেদ মাসুদ পাইলট: তার সেরা সময়ে উইকেটরক্ষক হিসেবে বিকল্প কেউ ছিল না যে খালেদ মাসুদ পাইলটকে দ্বিতীয় সেরা প্রমাণ করতে পারে। তবে সব কিছুরই যখন একটা শেষ আছে, পাইলটকেও থামতে হয়েছে। ২০০৭ সালে টেস্ট আঙ্গিনা ছেড়েছেন ৪৪টি ম্যাচ খেলে। অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস আছে তার। ৪১ বর্ষী এই তারকা বর্তমানে প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্বে আছেন। বিপিএল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সহকারী কোচ তিনি। উঠতি ক্রিকেটার হান্টের নানা প্রোগ্রামেও কাজ করে চলেছেন সমানতালে।

মোহাম্মদ রফিক: বল হাতে নিজের সময়ে বাংলাদেশ দলের সেরা ছিলেন। বাঁহাতি এই স্পিনার ২০০৮ সালে টেস্ট ছাড়ার সময় নামের পাশে ঠিক ১০০ উইকেট যোগ করেছেন। সঙ্গে ১১১ রানের একটি ইনিংস নিয়ে হাজারের ওপর রান। খেলা ছেড়ে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। ৪৬ বছর বয়সী তারকা মাঝে বিসিবির হাই-পারফরম্যান্স স্কোয়াডের (এইচপি) স্বল্পকালীন স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।

হাসিবুল হোসেন শান্ত: ছিলেন দ্রুতগতির বোলার। বিশালদেহী এই পেসার খেলা ছেড়েছেন ২০০১ সালে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে টেস্ট খেলেছেন, ম্যাচ সংখ্যাও তাই পাঁচ পেরিয়ে যায়নি। অবসরে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। ৩৯ বছর বয়সী এই সাবেক বিসিএলের দল ওয়াল্টন সেন্ট্রাল জোনের কোচের দায়িত্বপালন করছেন। তিনি বিসিবির বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক কমিটিরও সদস্য।

বিকাশ রঞ্জন দাস: অভিষেক টেস্টে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে সম্ভাবনার তালিকায় ওপরের দিকেই ছিল নাম। কিন্তু বিকাশ রঞ্জন দাসের ক্যারিয়ারটা ওই এক টেস্টের বেশি এগোয়নি। পরে ব্যক্তিজীবনে ধর্মান্তরিত হয়ে মাহমুদুল হাসান নাম নিয়েছেন। বর্তমানে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে (ইবিএল) অফিসার পদে কর্মরত আছেন।-চ্যানেল আই



মন্তব্য চালু নেই