ঝিনাইদহে এবার ওয়াজ মাহফিলের ৯০ মেট্রিক টন চাল আ’লীগ নেতার পেটে!

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় ইসমাইল হোসেন নামে এক আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান ভূয়া ওয়াজ মাহফিল দেখিয়ে সরকারের জিআর প্রকল্পের ৯০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাত করেছেন। এ ঘটনা নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে সরকারী চাল কোষাগারে ফেরত আনার দাবী উঠেছে। এদিকে আওয়ামীলীগ নেতার চাল আত্মসাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সাপ্তাহিক সীমান্ত বাণীর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় সরকারী দলের তিন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা গ্রহন করায় মহেশপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম শাহিনকে শাসিয়ে মোবাইলে হুমকী দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ময়জুদ্দীন হামিদ। ফলে ওয়াজ মাহফিলের ৯০ মেট্রিক টন সরকারী চাল পকেটস্থ ও ওসির হুমকী দেওয়ার বিষয় নিয়ে গোটা মহেশপুর জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা ই্সমাইল হোসেন তার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি স্থানে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের নামে ত্রান অধিদপ্তরের জিআর প্রকল্পের ৯০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেন। সরকার ওয়াজ মাহফিলে আগম মুসল্লিদের আপ্যায়নের জন্য এই চাল বরাদ্দ দেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ৩/৪টি ওয়াজ মাহফিল দেখিয়ে অধিকাংশ চাল আত্মসাত করেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মংকর্তার কাছে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ইউপি চেয়ারম্যানের পেটোয়া বাহিনীর সদস্য আজিজুল, বাবু ও স্বপন তার উপর হামলা চালায়। সুত্রমতে ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ওয়াজ মাহফিলে মুসল্লিদের খাওয়ানোর জন্য প্রথম কিস্তিতে ৫০ মেট্রিক টন ও দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেন। এ চালের তিনি সুষ্ঠু ব্যবহার করেননি বলে এলাকাবাসি অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেরুন্নেছা বলেন, আমি আড়াই মাস এসেছি মাত্র। আমার সময়ে ৪০ মেট্রিক চাল দিয়েছি। রাতে আমি ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে দেখেছি, চেয়ারম্যান ওয়াজ মাহফিলের লোকজনের খাওয়াচ্ছেন। তবে আগের ৫০ মেট্রিক টন চালের খবর আমি জানিনা। তবে সরেজমিন পান্তাপাড়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তথ্য আংশিক সত্য। ইউনিয়নবাসির অভিযোগ বর্তমান নাশকতার আশংকার যত্রতত্র ওয়াজ মাহফিল হয় না। ওয়াজ মাহফিল করতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের মৌখিক বা লিখিত অনুমিত লাগে।

সে হিসেবে ৯০ মেট্রিক টন চাল খরচের মতো ওয়াজ মাহফিল পান্তাপাড়া ইউনিয়নে হয়নি বলে স্থানীয় মুরব্বীরা জানান। ওয়াজ মাহফিলের নামে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকার সরকারী চাল আত্মসাত করা হয়েছে এটা তিবালোকের মতো স্পষ্ট হলেও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন একেবারেই নীরব ভুমিকা পালন করছে। এদিকে জিআর প্রকল্পের চাল হরিলুটের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিক আহত করার ঘটনায় মহেশপুর থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি রেকর্ড করায় ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহীনকে হুমকী দিয়েছেন মহেশপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা ময়জুদ্দীন হামিদ।

বিষয়টি নিয়ে ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহিন জানায়, রোববার রাত ৮টা ৬ মিনিটে ০১৭১২-২১২৫১৪ নাম্বারের মোবাইল থেকে তাকে মামলার বিষয়ে আপত্তিজনক কথাবার্তা বলে এবং এখানে আমি কিভাবে চাকুরী করে তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। ওসির হুমকী দেওয়ার ঘটনায় মহেশপুর থানায় একটি ডায়েরী করেছেন তিনি। এ বিষয়ে ময়জুদ্দীন হামীদ সাংবাদিকদের জানান, মহেশপুরের বর্তমান ওসি আওয়ামীলীগ ধ্বংসের চেষ্টা করছেন। জামায়াত বিএনপির কর্মীদের নামে নাশকতা মামলা তদন্তের নামে দালাল নিয়োগ করে ওসি বাণিজ্য করছেন বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন।

হামিদ বলেন ওসি তার সাথে খারাপ আচরন করে বলেছেন মহেশপুর কারো কাছে ইজারা দেয়নি। ওসি মহেশপুরের আওয়ামী লীগের এমপি নবী নেওয়াজের দালাল বলেও হামিদ মন্তব্য করেন। এদিকে জিআর চাল হরিলুটের বিষয়ে মহেশপুরের পান্তাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার নামে কোন প্রকল্প নেই। ওয়াজ মাহফিলে মুসল্লিদের খাওয়ার জন্য ৯০ মেট্রিক টন চাল পিআইসিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। এ ছাড়া সাংবাদিক রাজ্জাককে মারপিটের ঘটনাও আমি জানি না।



মন্তব্য চালু নেই