ঝালকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে বাড়ছে শিশুশ্রম
আল আমিন, ঝালকাঠি সংবাদদাতা : ঝালকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। পরিবহন, ওয়ার্কশপ, ওয়েল্ডিং, ইটভাটা, দিনমজুরসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুদের নিয়ে সেভ দ্যা চিলড্রেনদ কাজ করার কথা থাকলেও তারা কাজ করছে নবজাতকের পরিচর্যার কাজ। এছাড়াও শিশু অধিকার সনদসহ শিশুদের অধিকার ও শিক্ষার হার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে সভা এবং সেমিনার ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমনটাই মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। ইটভাঙার কাজ করে নাইম। তার বয়স ১০ কি ১১ বছর। নিজের বয়স কত হয়েছে তাও সে জানে না। বাবা নেই, মা একা, তারা দুই ভাই-বোন। ছোট বোনটার বয়স বছর দেড়েক। বছর খানেক আগে থেকে বাবাকে দেখি না। মার কাছে জিজ্ঞাসা করলে বলে তোর বাবা মারা গেছে। ছোট বোন লগে (সঙ্গে) নিয়ে মা মানুষের বাসায় কাজ করে। আমাকে এখানে কাজে রেখে বাসায় কাজ করতে গেছে। কত টাকা বেতন পাচ্ছে তা জানে না নাইম। মা কোথায় কাজ করছে তাও বলতে পারে না নাইম। তবে শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় সুতালড়ি পুলিশ লাইনের পিছনে তাদের বাসা এটিও সঠিকভাবে বলতে না পেরে ইশারায় দেখিয়েছে। কথা হয়েছিল সুতালড়ি পুলিশ লাইনের পিছনে বসেই। সেখানে ইট ভাঙার কাজে ব্যস্ততার মধ্যে এ কথাগুলো বলে নাইম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝালকাঠি আন্তঃজেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে চলছে আন্তঃজেলা শ্রমিক ইউনিয়ন। সেই পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নে সদস্য না হয়েও কাজ করছেন অনেক শিশু। বয়স তাদের ১০ থেকে ১৭ এর মধ্যে। কথা হয় শিশু শ্রমিক রবিউলের (১৩) সঙ্গে। রবিউল জানায়, বরিশালের সালাম মিয়ার পেট্রল পাম্প সংলগ্ন তার বাসা। বাবা মো. কবির হোসেনও পরিবহন শ্রমিক (করণিক)। সে ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মেঝ। বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। বাবা কবির হোসেন করণিক পদে চাকরি করে পরিবারের খরচ বহন করতে না পারায় বড় ভাই জুয়েল (১৫) দুই বছর আগেই কাজে নেমেছে। এ বছরের শুরুতে বাবাকে সহায়তা করতে পরিবহন শ্রমিকের কাজে নেমেছে রবিউল।রবিউল আরো জানান, আমাকে দিয়ে পরিবহনের (গাড়ির) যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া উঠানো হয়। অনেক যাত্রী আছে যারা গাড়ির ভাড়া কম দেয়ার জন্য ধমক দেয় এবং মারতেও চায়। গাড়ির ইঞ্জিনের কাজ পড়লে (দরকার হলে) আমাকে গাড়ির নিচে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজ করানো হয়। রাতে কাজ পড়লে যতক্ষণে কাজ শেষ না হয় ততক্ষণ সরাসরি বৈদ্যুতিক সংযোগের লাইট হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কাজে নামায় এখন আর স্কুলে যেতে পারি না। এ ব্যাপারে জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ খান, শিশুদের পড়ালেখা না করিয়ে শ্রমে লাগানো শিশু অধিকারের চরম লঙ্ঘন। শিশুদের প্রতি আরো যতœবান হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই