‘জ্ঞানী-গুণীরা কীভাবে বিএনপিকে ভোট দেন’

যারা নিজেদের সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনে করেন তারা কীভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেন- এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যাদের এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে তারা বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন করতে পারেন না।’

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শুক্রবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদাররা যেভাবে মানুষ মেরেছে। ঠিক এখন সে কায়দায় বিএনপি-জামায়াত মানুষ হত্যা করছে। যারা জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের কেউ সমর্থন করতে পারে না।

আমাদের দেশের জ্ঞানী-গুণীরা কীভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখনও কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেদের সমাজের জ্ঞানী-গুণী মনে করেন। তারা কীভাবে এই গণহত্যা সমর্থন করেন। তারা কীভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেন। কীভাবে তাদের সমর্থন করেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী থেকে সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে খালেদা জিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় তারও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের। আজকে যখন দেখি সবসময় কিছু মানুষ থাকে যারা অন্য মানুষের ভাল দেখতে পারে না, কল্যাণ দেখতে পারে না। আর এরা সবসময় সুযোগের সন্ধানে থাকে। খুব সহজ পথে ক্ষমতা দখল, ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করা, ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা। এই ধরনের ফাঁকফোকর এরা খুঁজে বেড়ায়।

ক্ষুধা ও মুক্ত দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, আজকে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আজকে বাঙ্গালি সমাজের বিভিন্ন জায়গায় কত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু একসময় অবস্থা এরকম ছিল না। পরাধীনতার নাগপাশে এই বাঙালি ধুঁকে ধঁকে মরছিল। একমাত্র জাতির পিতা শেখ মুজিব বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তিনি যখন পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়েছেন তখনও এদেশের কিছু মানুষ পাকিস্তানীদের দোসর হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করেছে।

স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কৌশল ও সিদ্ধান্তের স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তিনি জানতেন, ইলেকশন হলে তারা (পাকিস্তানি) আমাদের ক্ষমতা দেবে না। আমাদের যুদ্ধ করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু একটা জিনিস সব সময় লক্ষ্য রেখেছেন কখনো আমাদের যেন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে না পারে। বিচ্ছিন্নতাবাদী হলে আর্ন্তজাতিক সমর্থন পাওয়া যায় না। আর্ন্তজাতিক সমর্থন না পেলে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা হবে না, শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা হবে না। কোন রকম সাহায্য পাব না।

এ ধরনের ব্যবস্থা মাথায় রেখেই তিনি ধাপে ধাপে পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং অপেক্ষা করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন কেউ কেউ বলেন ৭মার্চ ঘোষণা দিলে তখনই স্বাধীন হই। কেউ বলেন আগেই সব জানিয়ে দিল না? কেন একটি যুদ্ধ কর। তাহলে সব পাকিস্তানি সেনা মেরে সব (যুদ্ধাস্ত্র)নিয়ে নিতাম।

এই ধরনের কথা বা চিন্তা যারা করে। তারা আসলে ইতিহাস পড়েননি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের যে ইতিহাস আছে, মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস আছে। সেই ইহিতাস সম্পর্কে যাদের এতটুকু জ্ঞান নাই, ধারণা নাই তারাই এ ধরনের কথা বলতে পারেন।’

আন্দোলনে তখন একটা জিনিস ছিল যে, আক্রমণকারী কারা হবে। কারণ যারা আক্রমণকারী হবে তারা হবে অপরাধী। আর আক্রমণকারীদের পাল্টা আঘাত দেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধূরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দূর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা, এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই